পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিবারণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ‘রোটারি ক্লাব বারিধারার’ বক্তারা।
আজ ১৩ আগস্ট রোববার রাজধানীর দ্যা ওয়েস্টিন গুলশানে রোটারি ক্লাব বারধিারার উদ্যোগে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু পরিহারযোগ্য: প্রয়োজন সচেতনতা, তদারকি, পানি থেকে সুরক্ষা কৌশল এবং শিশু উন্নয়ন কর্মসূচি বিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এই কথা বলেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যাপক ড. মোঃ ইদ্রিস আলম বলেন, শিশু এবং কিশোরদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল পানিতে ডুবে মৃত্যু যা বর্তমানে একটি অবহেলিত জাতীয় সংকট। বাংলাদশের প্রথম স্বাস্থ্য এবং তথ্য জরিপ (২০১৩) অনুযায়ী ১-১৭ বছরের শিশুদের অপমৃত্যুর প্রধান কারণ হল পানিতে ডুবে মৃত্যু যা যৌথভাবে নিউমোনিয়া, অপুষ্টি এবং কলেরা দ্বারা মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য এবং তথ্য জরিপ (২০১৬) অনুযায়ী বছরে ১৪,৪৩৮ জন (১-১৭ বছর বয়সী) শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল-১.বয়স্কদের তত্ত্বাবধানের অভাব ২. গ্রামে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের অভাব ৩. অতি দারিদ্রতা ৪. পুকুর-জলাধারে নিরাপত্তা বেষ্টনির অভাব এবং ৫. সাঁতার না জানা। বাংলাদেশে প্রায়শ ৮-৯ বছরের বাচ্চাদের সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যেতে দেখা যায়। যদিও একটি সুস্থ বাচ্চাকে ৪-৫ বছর বয়স থেকে সাঁতার শিখানো উচিত। পুকুর, ডোবা, খাল, বালতি এবং বাকেট ইত্যাদি জায়গায় বিভিন্ন বয়সী শিশুরা মারা যায়। ৫ বছর বয়সীদের ৮০ শতাংশ পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটে বসত ঘর থেকে ২০ মিটার দূরত্বের মধ্যে পুকুর-জলাশয়ে। বাংলাদেশে একাধিক শিশু বিশেষভাবে জোড়া শিশু একইস্থানে একই সাথে পানিতে ডুবে মারা যেতে দেখা যায়। সাধারণত একটি শিশু অন্য শিশুকে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সময় বাঁচাতে গিয়ে এক সাথে মারা যায়। এতে বুঝা যায় শিশুকে পানি থেকে নিরাপত্তা কৌশল বিশেষত নিরাপদ উদ্ধার কৌশল সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় না।
ইদ্রিস আলম বলেন, ডিজাস্টার অ্যাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (দাদু) পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিবারনে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জনসচেতনতা এবং মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাঁতার প্রশিক্ষণ এবং জলাধার থেকে সুরক্ষা কৌশল শিখানো, অনিরাপদ জলাধারে বেষ্টনি প্রদান এবং কমিউনিটি ডে কেয়ার স্থাপনে কাজ করছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিবারনে ভূমিকা পালন করা যেতে পারে। যেমন ১. শিক্ষা ঘর থেকে শুরু হয়- পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করা, ২. বাড়িতে শিশু পানি থেকে নিরাপদ কিনা পর্যবেক্ষণ করা, ৩. পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ভয়াবহতা পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর সাথে আলাপ করা, ৪. বন্ধুদের সাথে আলোচনার আড্ডায় অন্য বিষয়ের সাথে এবিষয়টি উপস্থাপন করা, ৫. প্রতিবেশীদের বাচ্চারা নিরাপদ কিনা পর্যবেক্ষণ করা, ৬. উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা করা, ৭. জলাধারের পাশে বেষ্টনি প্রদানের ব্যবস্থা করা, ৮. নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা এবং অন্যকেও উৎসাহিত প্রদান, ৯. আর্থিক সক্ষমতা থাকলে দরিদ্র পরিবারকে বেষ্টনিযুক্ত খেলাঘর প্রদান, ১০. শিশুদেরকে সাঁতার শিখানোর ব্যবস্থা করুন (একটি সুস্থ বাচ্চা ৪-৫ বছর বয়স থেকে সাঁতার শিখা শুরু করতে পারে), ১১. ইউটিউব এবং স্বীকৃত প্রশিক্ষণকারীর কাছ থেকে সিপিআর প্রশিক্ষণ ১২. এলাকায় যুবকদের সমন্বয়ে ক্যাম্পেইন দল গঠন ১৩.জাতীয় জনসচেতনতা ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ ১৪. এলাকায় কমিউনিটি ডি কয়োরের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বাস্তবায়ন ।
কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন রোটারি ক্লাব বারিধারার প্রেসিডেন্টে সাইফুল হক। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং ডিজাস্টার অ্যাকশন এন্ড ডেভেলেপমন্টে অরগানাইজশেন (দাদু)’র প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. মোঃ ইদ্রিস আলম।