বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে প্রতিশ্রুতিশীল, ভাওয়াইয়া, বাউল, প্রবীণ ও শিশু-কিশোরদের জন্য ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন শুরু হয়েছে শিল্পকলায়। আয়োজনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় ছিলো পঞ্চকবির গান।
কবিতা লেখার পাশাপাশি একইসাথে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক- বাংলা সাহিত্যের এমন পাঁচজন কালজয়ী কবিকে একত্রে বলা হয় পঞ্চকবি। তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদ সেন। এই পঞ্চকবির গান নিয়ে জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য তুলে ধরেন নজরুল বিশেষজ্ঞ সংগীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল এবং অনিমা রায়। প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজনের প্রশংসা করেন তারা ।
পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি ১ হাজারের বেশি শিল্পী তালিকাভুক্ত করেছে। সকল শিল্পী ও শিল্পের বিকাশের লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমরা তা ছড়িয়ে দিতে পারি।’
হাজার বছরের পুরোনো এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুনদের জানাতে হবে। পঞ্চকবি দেশের সম্পদ। রুচিশীল হয়ে বাঁচতে এই পঞ্চকবি অনেক উচ্চতা যোগ করবে- উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার কারণে রুচির দুর্ভিক্ষ তৈরী হচ্ছে, যেখানে ভাবভঙ্গি প্রকাশের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কোন শিল্প নেই। যে যেভাবে পারছে এটিকে ব্যবহার করছে, ফলে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে কেবল শিল্পসংস্কৃতি।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই একক সংগীত পরিবেশন করেন সুস্মিতা দাস “আমার মুক্তি আলোয় আলোয়” এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা রায় “বধুয়া নিদ নাহি আঁখি পাতে”, শবরী মজুমদার পরিবেশন করেন – “এই কথাটি মনে রেখো” । একক নৃত্য পরিবেশন করেন অনিন্দিতা খান “জয় হোক” । “আমি চিরতরে দূরে যাব তবু” একক সংগীত পরিবেশন করেন সঞ্জয় কবিরাজ। “সখা তোমারে পাইলে আর” পরিবেশন করেন মণীষা সরকার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ আবৃত্তি করেন মো. সিরাজুর রহমান। এরপর আবারো নৃত্য পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা সরকার-“প্রচণ্ড গর্জনে”।
খাইরুল আনাম শাকিল পরিবেশন করেন কবি নজরুলের গান। এরপরে একক সংগীত পরিবেশন করেন তমালিকা হালদার, “গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে”। মতিউর রহমান পরিবেশন করেন- “জানি জানি তুমি এসেছ এ পথে”। এর পরে নৃত্য পরিবেশন করেন সাইফুল ইসলাম সাকী- “গহনো ঘন ছাইলো”। কবি কাজী নজরুলের ‘কুলিমজুর’ আবৃত্তি করেন সিফাত আরা ভুঁইয়া। এরপর সংগীত পরিবেশনায় ছিলেন কবরী দাস, একক নৃত্যে এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান ‘মেঘেরও ডমরু’ এবং দেবজানী দাসের একক সংগীত ‘কেমনে রাখি আখিঁ বারি চাপিয়া’ পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন দিলরুবা সাথী।
১০ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার (২ জুন) পরিবেশিত হবে দেশের গানের অনুষ্ঠান: প্রিয় দেশমাতৃকা। এর পরবর্তীতে থাকবে বাউল গানের অনুষ্ঠান অচিনপাখি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান নিয়ে অনুষ্ঠান- সিনেমার গান, পালাগান। শিশু-কিশোরদের নিয়ে অনুষ্ঠান নতুন যৌবনের দূত এবং ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান; মাটির সুর সহ নানা আয়োজন। অনুষ্ঠানটি হবে একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে।