দেশের সিনেমা হল মালিক সমিতি বলছে, বর্তমানে দেশে ৬৫টির মতো সিঙ্গেল স্ক্রিন চালু আছে। হল মালিকদের কথা, এ বছর জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগাতে পারেনি। এতে প্রযোজকদের পাশাপাশি হল মালিক নিজেরাও লোকসান গুনছেন বলে দাবি করেন।
প্রদর্শক সমিতির ভাষ্য, আশা জাগিয়েও নতুন বছরে মুক্তি পাওয়া ‘ব্ল্যাক ওয়ার’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘সাঁতাও’, ‘ভাগ্য’ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। ওদিকে হল টিকিয়ে রাখতে যে পরিমাণ মানসম্মত ছবি দরকার তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন প্রযোজক-পরিচালকরা।
এ কারণে হল-মালিকরা চাইছেন, আমদানি করে হিন্দি ছবি প্রদর্শন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। তাদের বিশ্বাস, নতুন নতুন হিন্দি ছবি এলে সিনেমা হলে দর্শক ফিরবে। এমনকি দেশের আধুনিক সিনে থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও চাইছে হিন্দি ছবি চালাতে।
সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাস করেন, হিন্দি ছবি মুক্তি দিতে পারলে দর্শকদের হলে আসার অভ্যাস তৈরি হবে। এমনকি রাজধানীর পার্শ্ববর্তী একাধিক হল সংশ্লিষ্টরা আগ্রহী হয়েছেন হিন্দি ছবির প্রদর্শনে।

কিন্তু আমদানি করে হিন্দি ছবি মুক্তিতে অনেকেই বিরোধিতা করে বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন। আমদানির নীতিমালার বিভিন্ন অনুচ্ছেদ দেখিয়ে আটকাতে চাইছেন হিন্দি ছবির মুক্তি। কিন্তু প্রদর্শক সমিতির কথা, সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখতে আপাতত হিন্দি ছবির উপর শেষ ভরসা করতে হচ্ছে।
সিনেমা হল মালিক সমিতির সেক্রেটারি আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, সবকিছুর অবাধ বাণিজ্য হচ্ছে। সংকট কাটাতে সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে ভারত থেকে কাঁচামাল (চাল, ডাল, পেয়াজ, গরু) আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে সিনেমা সংকট থাকলে আমদানিতে সমস্যা কোথায়?
সিনেমা হল মালিকদের জন্য সরকার হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলছিলেন, হলে ছবি চালিয়ে সরকারকে ওই ঋণসুদ সহ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু যে অবস্থা চালানোর মতো তেমন ছবি নেই। তাই ঋণ নিলে শোধ করতে সমস্যা হবে। বছরে কমপক্ষে ১০টি করে হিন্দি ছবি আসার সুযোগ দিলে হলে ব্যবসা করে আমরা সরকারকে ঋণ শোধ দিতে পারবো।
প্রদর্শক সমিতি চাইছে, বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তি পাক। তাহলে অন্তত কিছু ব্যবসা হবে। এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা সব চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু মুক্তির এখনও অনুমতি পাইনি। যদি মিরাকল কিছু না ঘটে তাহলে হয়তো আটকে যাবে! আমাদের কথা হল হিন্দি ছবি দেন নইলে শাকিব খানের ছবি দেন। কারণ, সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে একমাত্র শাকিব খানের নতুন সিনেমা দেখতে বেশী দর্শক আসে। চালু থাকা বেশিরভাগ হলে তার পুরান ছবি চলছে।
তিনি বলেন, শাকিব খানের নতুন সিনেমা আসছে না। আগে সে বছরে ৫ থেকে ৭টি করে সিনেমা করতো। যতদূর জানি গত ঈদেও তার ছবি আসেনি। শাকিবের বিকল্প এখনও কেউ হয়ে ওঠেনি। তার ছবি পাই না, হল টিকিয়ে রাখতে হিন্দি ছবি চাইলে সেটিরও অনুমতি পাচ্ছি না। তাহলে আমরা কোথায় যাবো?
করোনা পরবর্তী হলিউড বলিউড তামিল ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা হলেও ঢাকার সিনেমা সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি উল্লেখ করে মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, আমাদের ব্যবসায়িক মন্দা কাটেনি। মধুমিতার মতো সিঙ্গেল স্ক্রিনের জন্য কমার্শিয়াল সিনেমা লাগবে। ভালো ছবি না পেয়ে হল আপাতত বন্ধ রেখেছি। কারণ চালু রাখলে যে খরচ সেটা উঠে আসে না। আমরা পারছি না বিধায় শুরু থেকে আমি হিন্দি ছবি আমদানির পক্ষে।
বিশ্বব্যাপী ‘পাঠান’ মুক্তির সময় থেকে বাংলাদেশে ছবিটি আমদানির তোড়জোড় করছেন অনন্য মামুন। তিনি বলেন, বিভিন্নজনের আশ্বাসের উপরে আছি। শিল্পী সমিতি শর্ত সাপেক্ষে সম্মতি দিয়েছে। অন্যান্য সমিতিগুলোও মৌখিক সম্মতি দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটা নিশ্চিত ফলাফল পাবো।