প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে তাদের কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারাদেশে কর দিতে যারা সক্ষম, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। তিনি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।।
আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।
কাজেই আমাদের সেগুলির মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আজ তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্বেও এগুলো অধিকমূল্যে কিনে নিয়ে আনছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে , ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার। আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সেখানে ভর্তুতি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে, কৃষিতে সরকার ভর্তুতি দিচ্ছে, করোনাকালিন ব্যবসায়ীদের শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এভাবেই সরকার সকলকে দুঃসময়ে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারবো? তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবে ।
আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরের সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন। এখন আর কেউ কুঁড়েঘরে বাস করেনা, ভূমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে তাঁর সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর্থিক সহাযতা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যাদের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা রয়েছে, সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে, তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা। সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয় সেজন্য করের পরিমাণটাও এমন রাখতে হবে যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে কর দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন।
তিনি বলেন, ই-টিনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে সক্ষম করদাতাগণকে কর নেটের আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগ কর্তৃক নন ফাইলার কোম্পানীর রিটার্ন দাখিলের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য ই-ফাইলিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসেস’ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালি ব্যাংকসহ সকল তফসিলি ব্যাংক, বেপজা, সিসিআইএন্ডই, বিআরটিএ, আইএটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমের ইন্টারফেসিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি। আয়কর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত মোট রাজস্ব আয়করের অবদান শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনা অতিমারি দুর্যোগের মধ্যেও আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের অধিক। কল্যাণমুখী ও জনবান্ধব কর আইন প্রণয়ন সমাজে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার। কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব কর নীতি, কর আইনের প্রয়োগ, সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা দূরীকরণ ও তথ্য-প্রযুক্তিবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেজন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার।