আসাদুজ্জামান বাবুল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন, সন্তানরা যেন মাদক বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আজ শনিবার দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি-তালিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণকালে একথা বলেন তিনি।
এসময় পদ্মা সেতু নির্মাণ ও সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ টুঙ্গীপাড়া আসতে স্টিমার বা লঞ্চে ২২ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মাত্র ২ থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ বা কোটালীপাড়া থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ নিয়ে আমাদের অনেকেই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এমন কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য করতে আসিনি, জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয় সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি না।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা সফল হয়নি, দিতে পারেনি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই এত দ্রুত এই গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়ায় আসতে পারছি, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানবো না।
জনগণের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ওয়াদা করেছিলাম মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিবো। সেই ওয়াদা পালন করেছি। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন বাবা-মা ও ভাইসহ সব হারিয়েছি আমি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মারা গেছেন যখন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ঘাতকরা হত্যা করেছে আমার মা, ছোট ৩ ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার মানুষই আমাকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করে থাকেন। আমি সব সময় সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারিনা, কারন আমার বাংলাদেশের ৩০০ সিটেরই দায়িত্ব, পাশাপাশি এই বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দায়িত্ব আছে। একটা ঘনবসতিপূর্ন দেশে নানা রকমের দুর্যোগ থাকে। কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো বিএনপি সন্ত্রাসের অগ্নিসংযোগ বা সন্ত্রাসীর কর্মকান্ড। এই নানা কারণে আমাকে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকতে হয়।
আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, বাবা-মা, ভাই হারিয়ে আমি নিঃস্ব। কিন্ত আপনারা আমাকে বুকে স্থান দিয়েছেন। আমার নির্বাচন থেকে শুরু করে সব বিষয়ে যেভাবে আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে আপনাদের মাঝে ফিরে পাই আমার হারানো বাবা, হারানো ভাই। আপনাদের কাছ থেকে মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা পেয়ে থাকি। এটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তিই হচ্ছেন আপনারা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দেশের সকল ভূমিহীনদের ঘর করে দিবেন, বিনা পয়সায় ঘর এবং জমি দিবেন। কিন্ত সে কাজ তিনি করে যেতে পারেননি। আমি তার সে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ করেছি, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ করেছি। আমরা এখন বিনামুল্যে ঘর, ২কাঠা করে জমি, জীবন-জীবিকার জন্য অর্থ এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবেনা। এই এলাকায় যারা ঘর পাননি তাদেরও ঘর করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটালীপাড়া- টুঙ্গিপাড়া এলাকায় একটু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা সকল অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে ফসল ফলান। আমরা আপনাদের সহযোগীতা করবো। টাকার অভাবে কেউ ফসল ফলাতে পারছেনা এমনটা যেন না হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া ও সদর উপজেলায় বাস্তবায়িত ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্ধোধন ও ৫টি নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।