পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, পিসিওএস নামেই যা সবার কাছে পরিচিত। নারীদের প্রজনন বয়সে হরমোনজনিত খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। শুধুমাত্র ভুল ধারণার কারণেই শতকরা ১০ ভাগেরও বেশি নারী পিসিওএস তীব্রতায় ভোগেন।
এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে, এর কারণে ওভারিতে জন্ম নেওয়া সিস্টের নামে। তবে অবশ্যই মনে রাখা উচিত, সিস্ট হওয়া এই সমস্যার একটি লক্ষণ মাত্র, এর মূল কারণ নয়। আল্ট্রাসাউন্ডে ওভারিতে সিস্ট দেখতে পাওয়ার মানেই যে কারও পিসিওএস সমস্যা রয়েছে, তা কিন্তু নয়।
যশোদা হাসপাতাল হায়দ্রাবাদের ডা. ভাগ্য লক্ষ্ণী এস বলেন, অনিয়মিত মাসিক, শরীরে অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনের (পুরুষ হরমোন) উপস্থিতির লক্ষণ, ওভারিতে সিস্ট- এই ৩ টি লক্ষণের কমপক্ষে ২টি মিলেলেই পিসিওএস সন্দেহ করা হয়।
এই বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট প্রসূতি, গাইনোকোলজিস্ট এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন বলেন, পিসিওএস-এর সাধারণ লক্ষণ মুখ, বুক কিংবা তলপেটে অনাকাঙ্ক্ষিত চুল, মুখে ব্রণ, অতিরিক্ত চুল পড়া, অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণে জটিলতা (বন্ধ্যাত্ব)।
পিসিওএস গর্ভধারণে বাধা দিলেও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মাসিক ও ওভুলেশন নিয়মিত করা যায় কিংবা স্থূল হলে ওজন কমিয়েও এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। এরপরও যদি গর্ভধারণে সমস্যা হয়, তাহলে ওভুলেশন ডিজঅর্ডার দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া যায়।
যাদের পিসিওএস আছে, তাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রায় কোলস্টেরল ও এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পিসিওএস-এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই কেউ গর্ভধারণের চেষ্টা করুক কিংবা না করুক অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
এন্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে তা একেকজনে ক্ষেত্রে একেকরকম প্রভাব ফেলে। অনেকেরই চুল পড়া বা ব্রণের সমস্যা হয় না।
পিসিওএস হতে হলে ওভারিতে সিস্ট ধরা পড়তেই হবে, এটা পুরোপুরি সত্য নয়। ওভারি একদম স্বাভাবিক থাকার পরও পিসিওএস হতে পারে।
পিসিওএস-এর কারণে হওয়া সিস্টের আকার সাধারণত খুব বেশি বড় হয় না, তাই সার্জারিরও প্রয়োজন হয় না। অনেকসময় আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টে পানিভর্তি থলের মতো কিছু দেখা যায়, যেটা মূলত অপরিণত ফলিকল থেকে ওভারিতে জমা হয়। আর একেই মূলত সিস্ট বলা হয়ে থাকে।
যদিও স্থুলতা পিসিওএস হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি, তবে এ সমস্যায় ভোগা শতকরা ৫০ ভাগ নারীই হালকা অথবা মাঝারি গড়নের।
পিসিওএস-এর ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসায় ডাক্তাররদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধের পরামর্শ দিতে দেখা যায়। কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে চিকিৎসা আসলে নির্ভর করবে রোগী কী চায় তার উপর। যেমন, গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খেতে পারবেন না। সুতরাং এই চিকিৎসা হতে হবে মূলত লাইফস্টাইল কেন্দ্রিক।
ডা. ভাগ্য লক্ষ্ণী এস বলেন, পিসিওএস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, একে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে ওজন কমানো, ব্যায়াম এবং জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। ২-৩% ওজন হ্রাস ২১% পর্যন্ত টেস্টোস্টেরন কমাতে সাহায্য করে এবং এতে করে ওভুলেশন নিয়মিত হয়ে যায়।
পিসিওএস-এর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা থেকে বাঁচতে হলে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনার কোন বিকল্প নেই। যেমন অ্যালকোহল, ধুমপান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি আর লবণ খাওয়ার অভ্যাস বদলে ফেলতে হবে। সর্বোপরি, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।