চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

চিরকুট সূত্রে কলেজ ছাত্রীর কঙ্কাল উদ্ধারের পরে স্বামী গ্রেপ্তার

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় কলেজ ছাত্রী লামিয়া আক্তার (১৮)’কে হত্যা করে বালু চাপা দেওয়ার ঘটনায় মূল আসামী নিহত লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলাম (২২)’কে গ্রেপ্তার করেছে পিরোজপুর পুলিশের বিশেষ ইউনিট পিবিআই।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার আসামী তরিকুলকে পিরোজপুর বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত তরিকুলকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। তরিকুল নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের মিজান খানের ছেলে।

পিবিআই জানায়, আদালতে তরিকুল স্ত্রী লামিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এর আগে একটি চিরকুটের সূত্র ধরে গত ১৩ মার্চ নাজিরপুরের সাত কাছিমা গ্রামের একটি বালুর মাঠ থেকে গৃহবধু লামিয়া আক্তারের কঙ্কাল উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্তে পিরোজপুর পিবিআই এর একটি টিম।

পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ নভেম্বর গৃহবধু লামিয়া আক্তার (১৮) নিখোঁজ হলে তার নিখোঁজ সংক্রান্তে ঐ বছরের ৭ ডিসেম্বর নাজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ লামিয়ার মা বাদী হয়ে লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলাম, লামিয়ার শশুর-শাশুড়িসহ ৮ জনকে আসামি করে নাজিরপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে।

লামিয়া নিখোঁজের ৪ মাস পর গত ১২ মার্চ রাতের বেলা লামিয়া আক্তারের পরিবার একটি চিরকুট পায়। যাতে লেখা ছিল ‘তোমার মাইয়ার লাশ মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠে, ইতি মুমিন। সব জানে মেজো খালা’। উক্ত চিরকুট পেয়ে তারা থানা পুলিশকে অবহিত করলে পরের দিন ১৩ মার্চ চিরকুটের তথ্যের ভিত্তিতে নাজিরপুর উপজেলার সাতকাছিমা গ্রামের বালুর মাঠ থেকে লামিয়া আক্তারের কঙ্কাল উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় পুলিশ ঐ দিন রাতে লামিয়ার খালা শ্বাশুড়ি রেক্সোনা বেগম (৪০) কে পিরোজপুর সদর উপজেলার চুঙ্গাপাশা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে।

লামিয়ার কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় নাজিরপুর থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে পিরোজপুর পিবিআই।

পিবিআই এর একটি চৌকস দল তদন্তভার প্রাপ্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডস্থ জনৈক মোহাম্মদ আলী খানের ভাড়া বাসা থেকে নিহত গৃহবধু লামিয়া আক্তারের স্বামী এবং অপহরণ মামলার প্রদান আসামী মো. তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

পিবিআই’র সাব-ইন্সপেক্টর মো. রিফাত ইমরান জানান, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো. তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তরিকুল জানায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে লামিয়ার সাথে তরিকুলের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন আসামী তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেণীর ছাত্র এবং লামিয়া ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। গত বছরের (২০২২) মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটি শেষে তরিকুল বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার দিন লামিয়া তরিকুলেল বাড়িতে এসে ওঠে।

ফেসবুকে ‘তানিশা তানজিম’ নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুটি নগ্ন ছবি ছড়িয়ে পরার কারণে লামিয়া তরিকুলকে দায়ী করে এবং এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের চাপে ঐ দিন সন্ধ্যায় তরিকুল লামিয়াকে বিয়ে করে। উক্ত বিয়েতে আসামী তরিকুলের পিতা-মাতার অসম্মতি ছিল। তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায় বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়িতেই থাকতো। সেখানে তরিকুলের যাতায়াত ছিল।

বিয়ের ৭ মাস পর লামিয়াকে তার বাপের বাড়ি থেকে শশুর বাড়িতে তুলে নিতে না চাইলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে তরিকুল লামিয়ার সাথে গোপনে দেখা করে।

আসামী তরিকুল ভিকটিম লামিয়ার বাপের বাড়ি গিয়ে ঘরের বাইরে থেকে লামিয়াকে ডাক দিলে লামিয়া ঘরের বাইরে এসে তরিকুলের সাথে দেখা করে এবং ঘরের পাশের কলপাড়ে বসে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলে। কথা বলার একপর্যায়ে লামিয়া রেগে গিয়ে বলে, ছাড়াছাড়ি হলে তরিকুলের বিরুদ্ধে সে মামলা করবে। এ সময় তরিকুল লামিয়াকে গলা টিপে হত্যা করে। এরপর লাশ খালে ফেলে টেনে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে বালু খুঁড়ে লাশ বালু চাপা দিয়ে রাখে।

পরে রাত ২টার দিকে তরিকুল তার বাড়ি চলে যায়। পরবর্তীতে ঘটনার ৪ মাস পর গত ১১ মার্চ তরিকুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়ে ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লাভস কেনে। তারপর ঐ দিন রাত আনুমানিক ১১টার দিকে পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোড়ার পর লাশের হাত দেখতে পেয়ে লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হাতটা গর্তে রেখে পুনরায় লাশ বালু চাপা দিয়ে আসে।

পরদিন ১২ মার্চ রাতে আসামী তরিকুল একটি চিরকুট লিখে লামিয়ার বাবার বাড়ি ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানী বাইরে বের হয়ে চিরকুট দেখতে পায়। তরিকুল তখন খালের অপর পাড়ে বসেছিল।

এরপর লামিয়ার পরিবারের লোকজন টর্চ লাইট মারলে সে দৌড়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করে। ঐ রাতে কালিবাড়ির একটি বাগানে অবস্থান করে পরদিন বিকাল ৩টার দিকে তরিকুল ঢাকায় চলে যায়। পুলিশ ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তরিকুলকে গ্রেপ্তার করে।