চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আফগানদের হারিয়ে ফাইনালে পাকিস্তান, ভারতের বিদায় নিশ্চিত

শিরোপা লড়াইয়ে বাবরদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা

শ্বাসরুদ্ধকর আরেকটি ম্যাচের দেখা মিলল শারজায়। রান উৎসব হতে থাকা এশিয়া কাপে লো স্কোরিং ম্যাচেও থাকল শেষ ওভারের থ্রিলার। এমন রোমাঞ্চ ছড়াল যে আসরে এটিকেই সেরা ম্যাচের তকমা দিয়ে দিলেন ধারাভাষ্যকাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল পাকিস্তান। শিরোপা লড়াইয়ে তারা প্রতিপক্ষ পাচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। সঙ্গে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ভারত ও আফগানিস্তানের।

বুধবার ১৩০ রানের সহজ লক্ষ্যে নামা পাকিস্তান শুরুতেই ধাক্কা খায়। রানের খাতা না খোলা বাবর আজমকে পরাস্ত করে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ফজলহক ফারুকি।

মুজিব উর রহমানের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ব্যাট ছুঁয়েই দৌড় শুরু করেছিলেন ফখর জামান। নন স্ট্রাইক প্রান্তে এসে বিস্ময়করভাবে দৌড়ের গতি কমিয়ে দেন। এতে নাজিবুল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন ৫ রানে।

অল্প রানের পুঁজি নিয়েও পাকিস্তানি ব্যাটারদের চেপে ধরেন আফগান বোলার-ফিল্ডাররা। প্রথম ৬ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর যেখানে ছিল ২ উইকেটে ৪৮ রান, পাকিস্তান সেখানে সংগ্রহ করে ২ উইকেটে ৩৫ রান।

ওপেনিং ব্যাটার মোহাম্মাদ রিজওয়ান এক চার ও এক ছক্কার মারে ২০ রান করে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হন। রিজওয়ান রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। লো স্কোরিং ম্যাচে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন বিপদে।

আফগানিস্তান নিজেদের ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭২ রান তুলেছিল। পাকিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে জমায় ৫২ রান।

চাপে পড়া পাকিস্তান মোহাম্মদ নবির করা ১২তম ওভারে ১৪ রান তুলে কিছুটা মুক্ত হয়। এই ওভারে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন শাদাব খান। পরের ৩ ওভারে অবশ্য তারা ১৩ রানের বেশি নিতে পারেনি। ফলে শেষ ৩০ বলে জয়ের জন্য দরকার পড়ে ৪৫ রান।

চতুর্থ উইকেটে ৪২ রান যোগ করেন ইফতিখার আহমেদ ও শাদাব খান। ১৬তম ওভারে পেসার ফরিদ আহমেদের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ধরা পড়েন ধীর গতিতে ৩০ রানের ইনিংস খেলা ইফতিখার। ভাঙে চতুর্থ উইকেট জুটি, ম্যাচে দারুণভাবে টিকে থাকে আফগানরা।

রশিদ খানের করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে শাদাব ছক্কা মারলেও দ্বিতীয় বলে শর্ট থার্ডম্যানে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের ক্যাচে পরিণত হন। ২৬ বলে এক চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ রান করে আউট হন শাদাব। ঘটনাবহুল ওভারের তৃতীয় বলে ক্রিজে এসেই ছক্কা মারেন আসিফ আলী। উইকেট হারালেও ওভারটিতে পাকিস্তান ১৪ রান তুলতে সক্ষম হয়।

ফারুকির পরের ওভারের প্রথম বলেই লেগ বিফোরে কাটা পড়েন ৪ রান করা নেওয়াজ। একই ওভারের শেষ বলে এক রান করে খুশদিল শাহ বোল্ড হলে জয়ের সম্ভাবনা জাগে আফগানিস্তানের।

শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ২১ রান। ফরিদ ১৯তম ওভারে বল হাতে নেন। দ্বিতীয় বলে শূন্য রানে হারিস রউফকে বোল্ড করে তিনি আফগানদের জয়ের রাস্তা মসৃণ করেছিলেন। চতুর্থ বলে আসিফ আলী ছক্কা মেরে সমীকরণ ৮ বলে ১২ রানে নামিয়ে আনেন। পঞ্চম বলে আবারও মারতে গিয়ে করিম জানাতের হাতে ধরা পড়েন ৮ বলে ১৬ রান করা আসিফ।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১১ রান, হাতে ছিল এক উইকেট। ফারুকির হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নবি। প্রথম বলটাই ফারুকি দেন ফুলটস, সোজা শটে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারেন নাসিম শাহ। সমীকরণ দাঁড়ায় ৫ বলে ৫ রান। পরের বলে আবারও ফুলটস দেন ফারুকি। আবারও লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক বনে যান ৪ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রান করা নাসিম।

আফগানিস্তানের পক্ষে ফারুকি ও ফরিদ ৩টি করে উইকেট নেন। দুটি উইকেট নেন রশিদ খান।

এর আগে শারজাহ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটে নামে আফগানিস্তান। দুর্দান্ত শুরু পেয়েও স্কোর বড় করতে পারেনি মোহাম্মদ নবির দল। ৬ উইকেটে ১২৯ রানের বেশি তারা করতে পারেনি। ৩৭ বলে ৩৫ রান করে আফগানদের সর্বোচ্চ স্কোরার ইব্রাহিম জাদরান।

ছোট মাঠে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে আফগান দল। ৩.২ ওভারে ৩৫ রান তোলার পর হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে। ১১ বলে ১৭ রান করা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বোল্ড করে পাকিস্তানকে সাফল্যের শুরুটা দেন হারিস রউফ।

স্লোয়ারের ফাঁদে ফেলে আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ যাজাইকে ফেরান মোহাম্মদ হাসনাইন। উইকেটে থিতু হয়েও বেশি রান করতে পারেননি করিম জানাত। ১৯ বলে তার ব্যাটে এসেছে মাত্র ১৫ রান।

নাজিবুল্লাহ জাদরান ফিরেছেন শাদাব খানের বলে ক্যাচ হয়ে। মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারানো দলটিকে ১২৯ পর্যন্ত নিয়ে যান রশিদ খান। ১৫ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন মূলত লেগ স্পিনার তারকা।

২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার হারিস রউফ। একটি করে উইকেট নিয়েছেন নাসিম, নেওয়াজ, শাদাব ও হাসনাইন।