চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রধানমন্ত্রীকে নারী ক্রিকেটারদের ‘স্যালুট’

গর্বের পদ্মা সেতু

রাত পোহালেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। রোববার থেকে সেতুতে চলবে যানবাহন। ঘাটের দুর্ভোগ থেকে মিলবে মুক্তি। আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন সকলে। ক্রিকেটার জাহানারা আলম ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ হিসেবে দেখছেন এটিকে। শত চ্যালেঞ্জের পরও এত কম সময়ে সেতু তৈরি হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেননি আরেক ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ। দেশের নারী ক্রিকেটের আইকন সালমা খাতুন মনে করেন স্বপ্ন সংযোগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।

লাল-সবুজের দলের এই তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের বাড়ি খুলনায়। রাজধানী ঢাকা থেকে সেখানে যেতে এখন সময় লাগবে চার ঘণ্টারও কম। অথচ গড়ে ৮ ঘণ্টার মতো লাগত এতদিন। মাঝের নদীপথ অনিশ্চিত করে তুলত যাত্রা। প্রায় দুইশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ২৪ ঘণ্টা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আছে রূপসাপাড়ের ক্রিকেটারদের।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে ক্রিকেটার ত্রয়ী কথা বলেছেন আগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও সম্ভাবনাময় আগামী নিয়ে। স্বপ্নের সেতু বাস্তবে রূপ দেয়ায় স্যালুট জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

রুমানা আহমেদ
‘এমন অনেক হয়েছে যে সিরিজ খেলে অন্য দেশ থেকে ঢাকা চলে এসেছি চার ঘণ্টায়। অথচ খুলনা যেতে লেগে গেছে পুরোদিন। এখন বিমানে বেশি যাতায়াত। তবে যশোর বিমানবন্দর থেকে খুলনা যেতে দুই ঘণ্টার বেশি লেগে যায়। পদ্মা সেতু দিয়ে গেলে বিমানের চেয়ে সহজ হয়ে যাবে আমাদের ভ্রমণ। যখন জাতীয় দলে ডাক পাই, প্রথম ক্যাম্পে ঠিক সময়ে আসতে পারিনি ঘাটে দেরি হওয়ায়। এজন্য আমাকে শাস্তিও পেতে হয়েছে। একবার তো সিলেটে খেলে আমরা ঢাকা হয়ে খুলনা ফিরে যাব, ফেরিঘাটে এতটাই দেরি হয়েছিল যে আমাদের লেগে যায় ১৮ ঘণ্টা। শীতকালে কুয়াশা, বর্ষাকালে স্রোত-ঢেউ আতঙ্ক নিয়েই আমাদের পদ্মা পাড়ি দিতে হতো। এখন আমরা খুব আরামে পৌঁছে যেতে পারব। ঘন ঘন বাড়ি যেতে পারব। পরিবারের মানুষের প্রয়োজনে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারব। দুর্ভোগ আর থাকবে না।’

‘এত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এত দ্রুত পদ্মা সেতু হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। এটি আমাদের সবার জন্য অনেক বড় উপহার। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কী যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। নিজের গাড়ি নিয়ে গেলেও ঝামেলা কমত না, বরং বাড়ত। ফেরিতে তুলতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। সবচেয়ে বড় নির্মম ব্যাপার হল, কত মানুষ যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা হয়ে পথেই মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। ঘাটে এতটাই দেরি হয় যে রোগীকে বাঁচানো যায় না। যখন করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে ছিলাম, তখন আমার ফুফু মারা যায়। ঠিক সময়ে ঢাকায় আনতে পারেনি। নিজের পরিবারের বাইরে এমন বহু ঘটনা রয়েছে।’

সালমা খাতুন
‘আসলে আমাদের খুলনা অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক সুবিধা হচ্ছে। ঘাটে কিন্তু সবসময়ই ভিড় থাকে। ঈদে কী অবস্থা হয় সবাই জানেন। খুলনা কিংবা বরিশাল, এ পথে দুর্ঘটনা ঘটেই। কখনও কখনও এত অল্প পথ পাড়ি দিতে ১০-১২ ঘণ্টাও লাগে। এখন চার ঘণ্টাও লাগবে না। প্রতিদিন দুইবার করে যাতায়াত করা যাবে। এটা অনেক বড় একটা অর্জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সাহস দেখিয়েছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমি আরিচা ঘাট দিয়ে বেশি যাতায়াত করতাম। এখন রুট একটাই, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে। প্লেনে যাওয়ার পরও দুই ঘণ্টা জার্নি করতে হয়েছে। আমার সবচেয়ে বড় জার্নি ১২ ঘণ্টা। ফেরি ঘাটে দেরি হয়েছিল। এত কম সময়ে খুলনা পৌঁছাতে পারব ভাবতেই অন্যরকম লাগছে।’

‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সবকিছুই দ্রুত হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের কাজটাও দ্রুত হবে। ক্রিকেট বলেন বা অন্যকোনো স্পোর্টস বলেন, সবকিছুরই বিকাশ ঘটবে। অনেকেই খেলার কাজে ঢাকায় আসে। যারা ট্রায়াল দিতে আসে তাদের জন্য সুবিধা হবে। একদিনেই সব কাজ শেষ করে ফিরে যেতে পারবে। অনেক সময় ফেরিতে আটকে রাস্তায় অনেক রোগী মারা যায়। সেটি আর হবে না। এখন দ্রুত হবে সবকিছু। এসব ভেবে সবারই অনেক ভালো লাগছে।’

জাহানারা আলম
‘আমার খুবই ভালো লাগছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে এত বড় একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, তাতে আমরা দেশবাসী কৃতজ্ঞ। নিজেও পথের ভোগান্তি সহ্য করেছি বহুবার। তিন থেকে চার বছর আগে করোনার একবছর আগে হবে হয়ত, কোরবানির ঈদের সময় এয়ার টিকিট পাইনি। ট্রেনের টিকিট করেছি কিন্তু ট্রেন ধরতে পারিনি। ঈদের দুই দিন আগে বাসের টিকিট নেই। বাধ্য হয়ে আমাকে মাওয়া দিয়ে যেতে হয়েছে প্রচণ্ড কষ্ট করে। দুই থেকে তিন কিলো হেঁটে। ওপাশ গিয়ে লঞ্চ ধরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতেই হবে। স্পিড বোটেও নদী পার হয়েছি বহুবার। করোনার মধ্যে বাইকে করে গিয়েছি। অনেক কঠিন ছিল বাইক ফেরিতে তোলা। সাধারণ মানুষ কতটা যে কষ্ট করে। হুড়োহুড়ি করে ওঠে। জ্যাম ফেস করে। কষ্ট সহ্য করে। জনসাধারণ কত কাছের মানুষ হারায়। নিজে ফেস করেছি, জানি কতটা কষ্ট। মনে করি দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও সবাই যে সুবিধাটা পাবে তা লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্টের মধ্যে একটা। যা প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণের জন্য করে দিয়েছেন। হিউজ অ্যাচিভমেন্ট। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ওনার প্রতি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আসলেই জনসাধারণের স্বপ্ন, দেশের স্বপ্ন।’

‘এখন হয়ত খুলনা বা দক্ষিণাঞ্চল বলেন গ্যাসের সাপোর্ট পাবে। বা অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজ যা ছিল না তা পাবে। সময় বাঁচবে। চাকরি, বিজনেসের দিক থেকেও ভালো হবে। রোগীর জন্য আধাঘণ্টা বা কয়েকটা মিনিট অনেক বড় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে সুব্যবস্থা করেছেন যাতায়াতের, এক্সপ্রেসওয়ে, টোল ব্যবস্থা অসাধারণ। রোগীরাও বড় সাপোর্ট পাবে সুচিকিৎসার। সার্বিক দিক থেকে সারা বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। সবাই মিলে একটা বাংলাদেশ। প্রত্যেকটা সিটি আমাদেরই। শুরুতে যখন ঢাকায় ক্যাম্প করতাম তখন দেখা গেছে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত জার্নিও করেছি। আরিচা ঘাট দিয়ে। ঘাটে ১২-১৪-১৮ ঘণ্টাও বসে থেকেছি। জ্যাম আর টিকিট পাওয়া যেত না। সমাধান পুরোপুরি হয়ে গেল এখন। নোটিস ছাড়াই হুট করে চলে যাওয়া যাবে। ২১ জেলার সব ইভেন্টের খেলোয়াড়রাই সুবিধাটা পাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে উন্নতি হতে বাধ্য। এই উন্নয়নটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করে দেখিয়েছেন, তাকে স্যালুট।’