চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হঠাৎ কেন আচরণ পরিবর্তন করেছে কেরালার হাতি পাদয়াপ্পা?

মানবসভ্যতায় হাতিকে সব সময় বৃহৎ এবং ধ্বংসী প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়ে থেকে। সাধারণত তাদের বিশাল আকৃতি এবং উগ্র স্বভাবের জন্য তাদের ধ্বংসী প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে হাতির প্রতি এমন মনোভাবকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের কেরালা রাজ্যের হাতি পাদয়াপ্পা।

পাদয়াপ্পার নাম দেয়া হয় ১৯৯৯ সালের জনপ্রিয় সাউথ ইন্ডিয়ান তারকা রাজনিকান্তের আলোচিত সিনেমা ‘পাদয়াপ্পা’ এর ওপর।

কেরালার মুন্নার গ্রামে গ্রামবাসীদের কাছে পাদয়াপ্পা তার বড় তুলতুলে কান এবং মানুষের সাথে তার বন্ধু সুলভ আচরণের জন্য পরিচিত।

শুধু গ্রামবাসী নয় পাদয়াপ্পা পর্যটকদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। অনেকেই জঙ্গল ঘুরতে গিয়ে পাদয়াপ্পার সাথে ছবি তুলে থাকে।

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই শান্ত প্রাণীটির মধ্যে কিছু ভয়ানক পরিবর্তন এসেছে। যে পাদয়াপ্পা আগে মানুষের বন্ধু ছিল, এখন সে আগ্রাসী আচরণ করতে শুরু করেছে।

সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি মাসে হাতিটি একটি গাড়ির উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। শুধু তাই নয় পাশের এক ধান খেতে ঢুকে বেশিভাগ শস্য খেয়ে ফেলে।

প্রায় ৫০ বছর ঊর্ধ্বে পাদয়াপ্পার আচরণে এমন পরিবর্তনের কারণ মনে করা হচ্ছে তার অভ্যন্তরীণ হরমোনাল পরিবর্তন।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের এশিয়ান এলিফ্যান্ট স্পেশালিস্ট গ্রুপের সদস্য ডঃ পিএস এসা বলেন, পাদয়াপ্পার ব্যবহারে পরিবর্তন তার বসবাসের জায়গা বনে হস্তক্ষেপের জন্যও হতে পারে। বিশেষ করে মানুষের স্বার্থের জন্য তার সঙ্গীদের ক্ষতি একটি বড় কারণ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বসবাসের জায়গা রক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি প্রাণীর সুরক্ষা জরুরি। এই ক্ষেত্রে হাতির বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষার জন্য জনগণ এর পাশাপাশি সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

তবে পাদয়াপ্পার ব্যবহার নিয়ে ভিন্নমত জানিয়েছেন স্থানীয় মুন্নার গ্রামের বাসিন্দা লালিতা মানি। তিনি বলেন,”পাদয়াপ্পা আমার বাসায় তিনবার এসেছে। তার ক্ষুধা লাগলে সে দরজার বাইরে এসে ডাক দেয়। আমি তাকে কলাসহ আরও কিছু খাবার দিয়েছিলাম। সে খেয়ে বাকিটা মুখে নিয়ে ধীরে ধীরে চলে গিয়েছিল। কোনো ক্ষতি করে নাই।

বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার হার্ডলিন রাঞ্জিত বলেন, “আমার দেখা সবচেয়ে মিশুক বন্য প্রাণী পাদয়াপ্পা। নিরাপদ দূরত্ব থেকে আমি একবার তার ছবি তুলছিলাম, সে আমাকে দেখে না দেখার ভান ধরে ঘুরে ছিল কিন্তু ক্যামেরার জন্য ঠিকই পোজ দিচ্ছিল।”

মুন্নার গ্রামের প্রধান ভিনোদ ভাত্তেকাত বলেন, “পর্যটন শিল্প উন্নায়নের জন্য পদয়াপ্পা আমাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।”

ভারতে প্রায়ই মানব ও প্রাণী সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায় কারণ প্রাকৃতিক আবাসস্থল সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া বন্য প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে মানব বসতিতে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তাদের পাল থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্বৃত্তরা ১০৫ জনকে হত্যা করেছে।

পাদয়াপ্পার বদলে যাওয়া আচরণে অনেকেই মন্তব্য করেছেন একটি বন্য হাতি বন্য ব্যবহারই করবে।