চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

‘শাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক’

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নির্মাতা আশিকুর রহমান

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিংকালে শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ সহ বেশকিছু বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ আনেন রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে এই ছবির প্রযোজক দাবি করা রহমতের সেইসব অভিযোগ নিয়ে রীতিমত দেশের গণমাধ্যম তোলপাড়।

যদিও এরইমধ্যে জানা গেছে, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক রহমত উল্লাহ নন, এই ছবির আসল প্রযোজক ভারটেক্স মিডিয়ার জানে আলম। শাকিবের অস্ট্রেলিয়ান আইনজীবীও এরইমধ্যে এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, শাকিবের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা থেকেই এসব গুরুতর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেন রহমত।

Bkash July

এবার এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির পরিচালক আশিকুর রহমান। অস্ট্রেলিয়া থেকে এই নির্মাতা ফেসবুকে এ বিষয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে মূল ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য আশিকুর রহমানের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:

চিত্রনায়ক শাকিব খানের নামে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। আমি উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযোগ করার মাধ্যমে কী লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে এটা অভিযোগকারীর কাছেই পরিস্কার নয়। যদি অনৈতিক কোনো কাজ কেউ সংঘটন করে থাকে, তবে তা যেকোন দেশের আইনেও অপরাধযোগ্য এবং আমাদের সবারই সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্যকোন সুবিধা চাওয়াটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তবে অপরাধ প্রমাণ হয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো অভিযোগকে সত্যি বলা যায় না এবং অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। একটি চলচ্চিত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, ব্যক্তিগত রোষানলের বিষয়ে সমাধান করা অগ্রহণযোগ্য।

শাকিব খান ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুবার অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৭-৮ দিনের শুটিং করেন। ২০১৮ সালে “সুপার হিরো” চলচ্চিত্রের শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়াতে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি নাকি পালিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে; যেটা বাস্তবে কখনও হওয়া সম্ভব না। এই দেশে কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে শেষ না দেখা পর্যন্ত তাকে দেশ ত্যাগ বা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে এই দুই চলচ্চিত্রের সকল কলাকুশলী সম্মান ও আতিথেয়তা সহকারে অস্ট্রেলিয়া আগমন ও ত্যাগ করেন।

২০১৮ সালে শাকিব খান ও অন্যান্য কলাকুশলীরা যখন হোটেল হলিডে ইন-এ অবস্থান করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়া পুলিশের দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তার রুমে যান। প্রায় ২০-৩০ মিনিটের অবস্থান শেষে তারা অন্যান্যদের আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে চলে যান। এই ঘটনা ছাড়া শাকিব খানের সাথে পুলিশের আর কোন ইন্টারেকশন আমার জানা নেই। সেই দিনও আমরা ইনডোরে মুভির ২টা দৃশ্য শুট করি। তার একদিন পর আমি রবিউল রবি ও শাকিব খানের আরেকজন লিগ্যাল প্রতিনিধি কোগরা পুলিশ স্টেশনে যাই, উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য।

শাকিব খানের প্রতিনিধি পুলিশের সাথে বিভিন্ন কাগজ পত্র নিয়ে আলাদা একটি রুমে বসেন। প্রায় ১ ঘণ্টার রুদ্ধদার আলোচনা শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের জানান, জনাব শাকিব খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতার তারা প্রমান পান নাই। তারপর তিনি শাকিব খানের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলেন এবং তাকে কোন সন্দেহ ছাড়া ও নিশ্চিন্তে সিডনিতে শুটিং করতে বলেন। উক্ত ঘটনার পর আমরা আরও দুই সপ্তাহেরও বেশি সিডনিতে শুটিং করি। সফলভাবে শুটিং করার পর সুপারহিরো চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মন জয় করে সুপারহিট হয়।

যেকোনো কাজ করার সময় ছোটখাটো ত্রুটি থাকে। সেগুলকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। খাবার দাবারসহ যে সকল অনর্থক অভিযোগ এসেছে সেগুলো আসলে অনভিপ্রেত ও ক্ষুদ্র মানসিকতার পরিচয় দেয়। শুটিংয়ের বিশাল কর্ম ব্যস্ততার মাঝে সময় পাওয়া কঠিন। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা বিরতিহীন শুটিং করার পর সবারই মূল লক্ষ্য থাকত বিশ্রাম নেয়া ও পরের দিনের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া। শাকিব খান এবং আমরা যতক্ষণ একসাথে শুটিং করেছি কখনও আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া কাজের বাইরে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কখনও আগ্রহ দেখাইনি।

আমি যে কয়বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিগতভাবে শুধুমাত্র এই মুভির জন্য গিয়েছি তার খরচ এই মুভিতে আমার পারিশ্রমিকের থেকে বেশি। এই মুভিতে কাহিনিকার ও পরিচালক হিসাবে আমি যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা টাকার অংকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

“অপারেশন অগ্নিপথ” চলচ্চিত্রটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে শুট করার একটাই কারণ ছিল, সেটা হল আমরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশকে বাংলাদেশ এর সিনেমার পর্দায় উপস্থিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু স্বার্থন্বেসি ও ঈর্ষা কাতর মানুষের কারণে আমরা অসাধারণ একটি গল্প পর্দায় আনতে পারিনি।

এই মুভিটি পর্দায় আসলে বাংলা ভাষায় দর্শকরা অসাধারণ একটি স্পাই থ্রিলার উপভোগ করতে পারত। আমরা সবাই এখনও চাই এই মুভির কাজ শেষ করতে। সময় বলে দিবে এই চাওয়াটা কত টুকু পাওয়া সম্ভব। তবে মাত্র ৮ দিনের শুটিং আর দুই মিনিটের টিজারএ যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে আমার মনে হয় না বিগত কয়েক বছরে কোন চলচ্চিত্র এতটা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অপারেশন অগ্নিপথ মুভিটি সত্যিকারের অগ্নিপথ পাড়ি দিয়ে একদিন সোনালি পর্দায় মুক্তি পাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View