
বাংলা ভাষার সাময়িকপত্রে ঈদসংখ্যার চর্চার ইতিহাস বেশ পুরনো। পালাবদলের সময়ে ঈদসংখ্যা, বিশেষত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে হয়ে উঠেছে অনিবার্য অনুষঙ্গ। দৈনিক পত্রিকাগুলোও প্রতি বছর ঢাউস ঈদসংখ্যা প্রকাশ করে। কিন্তু বিষয়বৈচিত্র্যে সময়ের সেরা লেখকদের খুঁজে পাওয়া যায় পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘অন্যদিন’ এর ঈদসংখ্যায়।
এবারও হল না ব্যতিক্রম। ঈদকে সামনে রেখে এরইমধ্যে বাজারে এসেছে অন্যদিন এর ঈদসংখ্যা। যথারীতি পাঠক মহলে সাড়াও ফেলেছে। এবার শুধু ছাপা কাগজে নয়, একইসঙ্গে দেশ বিদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে ক্লিক করেই পড়া যাবে এবারের সেরা ঈদসংখ্যাটি। এমনটাই জানিয়েছেন অন্যদিন এর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
ঈদসংখ্যার সোনালি সময় ছিল নব্বই ও নতুন শতকের শূন্য দশক। এখন কি তা খানিকটা ধূসর হয়ে পড়েছে? পাঠকেরা কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ঈদসংখ্যার জন্য? এ বিষয়ের গভীরে প্রবেশ না করেও এটা বলা যায় যে, ঈদসংখ্যার আবেদন এখনো আছে।
এ বিষয়ে ‘অন্যদিন’ সম্পাদকের ভাষ্য,“১৯৯৭ সালে প্রথাগত ঈদসংখার মাঝে নতুন মাত্ৰা যোগ করেছিল ‘অন্যদিন’। তারপর থেকে সচেষ্ট থেকেছে প্রতিবার নতুনভাবে ঈদসংখ্যাকে উপস্থাপন করতে। ‘অন্যদিন’-এর প্রতিযোগিতা সব সময় নিজের সঙ্গে। তাই প্রতিবছর প্রকাশনা ও মুদ্রণ সৌকর্যে ‘অন্যদিন’ ঈদসংখ্যা যেন আগের সংখ্যাগুলোর চেয়ে আরও বর্ণিল হয়ে ওঠে, বিষয়বৈচিত্র্যে যেন আরও সমৃদ্ধ হয়, আমাদের সেই চেষ্টা চলছে নিরন্তর। এই সংখ্যাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।”

কেন বিষয়বৈচিত্র্যে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ‘অন্যদিন’? মূলত পাঠক মাত্রই এবারের ঈদসংখ্যার সূচিতে চোখ বুলালেই বিষয়টি সম্পর্কে এর যৌক্তিকতা খুঁজে পাবেন। দেশ সেরা লেখকের সমন্বয় তো রয়েছে
গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণ, সাক্ষাৎকার, চলচ্চিত্র, সংগীত ও রান্না বিভাগে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে। হাসনাত আবদুল হাই, আন্দালিব রাশদি, সুমন্ত আসলাম, সাদাত হোসাইনের উপন্যাস সহ মোট ৬টি উপন্যাস ও খ্যাতিমান শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর উপন্যাস ‘মাওয়া থেকে হাওয়া’ ঠাঁই পেয়েছে অন্যদিন এর এবারের ঈদ সংখ্যায়।
শুধু তাই নয়, এবারের ঈদসংখ্যায় স্থান পেয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অগ্রন্থিত গল্প ‘কোথাও আলো নেই’। সৈয়দ শামসুল হকের সমুদয় গল্প নিয়ে তিন খণ্ডে প্রকাশিত ‘গল্পসংগ্রহ’ শীর্ষক সংকলনে মোট ১০৫টি গল্প মুদ্রিত হয়েছে। সম্প্রতি ৩৫ খণ্ডে তার রচনাবলি প্রকাশিত হয়েছে। এতদসত্ত্বেও কীভাবে অগ্রন্থিত গল্পটি ‘অন্যদিন’ এই সময়ে এসে ছাপলো?
এ বিষয়ে আছে অন্যদিন ঈদসংখ্যায় উল্লেখ আছে,“অনুসন্ধানে সৈয়দ শামসুল হকের অগ্রন্থিত গল্পের সন্ধান মিলছে। তেমনই এক অগ্রন্থিত গল্প হলো ‘কোথাও আলো নেই’। এটি প্রকাশিত হয়েছিল সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৯-১৯৭৫) সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষ: একাদশ সংখ্যা; আষাঢ় ১৩৬৬ বঙ্গাব্দে। এই সংখ্যার সহযোগী সম্পাদক ছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২-১৯৮৩)। সৈয়দ শামসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ‘সমকাল’ পত্রিকার ৬৮৬ থেকে ৬৯৮–তেরো পৃষ্ঠাজুড়ে ছাপা হওয়া ‘কোথাও আলো নেই’ গল্পটি অন্যদিনের এবারের ঈদ সংখ্যায় ছাপা হলো।”
বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন মফিদুল হক, কামাল চৌধুরী, চিন্ময় গুহ, ইমানুল হক এবং গৌতম মিত্র। বড় গল্প ‘স্বীকৃতি’ নিয়ে ঈদসংখ্যায় উপস্থিত সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আমীরুল ইসলাম, ত্রিদিপকুমার চ্যাটার্জী লিখেছেন কিশোর গল্প। নাসরিন জাহান লিখেছেন অণুগল্প, বিশ্ব সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক জেমস জয়েসের ‘এরাবি’ নামের একটি গল্পের অনুবাদ করেছেন মোজাফ্ফর হোসেন। দেশের নন্দিত ছড়াকার আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, রহীম শাহ, আনজীর লিটন, রোমেন রায়হান ও শুচি সৈয়দরাও আছেন এবারের অন্যদিনের ঈদ সংখ্যায়।
প্রবীন ও নবীন কবিদের সমন্বয়ে প্রতিবারের মতো বড় জায়গাজুড়ে স্থান করে নিয়েছে সমকালীন কবিতা। অন্যদিনের এই ঈদ সংখ্যায় কবিতা আছে মোহাম্মদ রফিক, মুহম্মদ নূরুল হুদা, মুনীর সিরাজ, শিহাব সরকার, ফারুক মাহমুদ, হাসান হাফিজ, বিমল গুহ, নাসির আহমেদ, জয় গোস্বামী, মোহাম্মদ সাদিক, শাহাবুদ্দীন নাগরী, আশরাফ আহমদ, আসাদ মান্নান, মৃদুল দাশগুপ্ত, ফরিদ কবির, বীথি চট্টোপাধ্যায়, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, সুবোধ সরকার, জাফর ওয়াজেদ, মিনার মনসুর, আরিফ মঈনুদ্দীন, মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, মারুফ রায়হান, মারুফুল ইসলাম, তারিক সুজাত, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, আব্দুল মান্নান শিকদার, শিহাব শাহরিয়ার, সাজ্জাদ আরেফিন, মাহ্বুব হাসান সালেহ্, হাসানাত লোকমান, বিভাস রায়চৌধুরী, মুস্তাফিজ শফি, মুজিব ইরম, নিরমিন শিমেল, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন ও নওশাদ জামিলদের।
গল্পেও প্রবীন-নবীনের ভারসাম্য দেখা গেছে। এ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে আনোয়ারা সৈয়দ হক, পূরবী বসু , সেলিনা হোসেন, মোহিত কামাল, শাহনাজ মুন্নী, মোস্তফা কামাল, সামস আহমেদ, মোহাম্মদ হোসেন, লুৎফুন্নাহার পিকি, মনি হায়দার, অদিতি ফাল্গুনী ও স্বকৃত নোমানের লেখা নতুন সব গল্প।
এছাড়া মইনুদ্দীন খালেদ নিয়েছেন রফিকুন নবীর দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার। ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামে এই সময়ের মেধাবী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের সাথে আড্ডা ভঙ্গিতে কথা বলেছেন সাংবাদিক জ. ই. মামুন।
এছাড়া বিশেষ নজর কাড়বে চলচ্চিত্র নিয়ে মোমিন রহমানের একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা এবং সংগীত ও মঞ্চ এই বিশেষ সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে যথাক্রমে ফরিদা পারভীন ও মঞ্চসারথী আতাউর রহমানকে। আছে কার্লোস ফুয়েন্তেসের একটি বিদেশি ভাষার সাক্ষাৎকার, যা অনুবাদ করেছেন রাজু আলাউদ্দিন।
‘অন্যদিন’ এর ঈদসংখ্যার প্রচ্ছদটি করেছেন খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের ভাষ্য,‘ঈদসংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা প্রচ্ছদ। সাতাশ বছর ধরে তিনি শুধু ‘অন্যদিন’ ঈদসংখ্যার প্রচ্ছদ করছেন। এও এক ইতিহাস।”