বাঁকবদলের জীবনে এখন একটা পরিচয় আছে মো ফারাহর। অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ব্রিটিশ ট্র্যাক অ্যাথলেট, জিতেছেন চার চারটি স্বর্ণপদক। জীবনের ৩৯ বছরে এসে চমকে দেয়া এক সত্য সামনে আনলেন এ কিংবদন্তি। জানালেন, তিনি আসলে হুসেইন আবদি কাহিন। পাচারের শিকার হয়ে আফ্রিকা থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রিটেনে।
বিবিসি টিভির ডকুমেন্টারি ‘দ্য রিয়েল মো ফারাহ’ অনুষ্ঠানে নিজের আড়ালের সবটা বলেছেন ব্রিটিশ অ্যাথলেট। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া জীবনের তিক্ত কিছু সত্যও সামনে এনেছেন। পরিবারের কাছে যাওয়ার জন্য মেনে নিয়েছিলেন অন্যের বাসায় কাজ করাটাও। এতদিন পর কেনো সেসব নিয়ে বলছেন, সেটিও জানিয়েছেন।
‘সত্যি হল আমি এমন নই যা আপনি মনে করছেন। অধিকাংশ লোক আমাকে মো ফারাহ নামে চেনে, কিন্তু এটি আমার নাম নয় বা এটি বাস্তবতা নয়।’
ফারাহ অর্থাৎ হুসেইন আবদি আগে পরিচয়ে বলতেন, তিনি সোমালিয়া থেকে শরণার্থী হয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। ডকুমেন্টারিতে জানিয়েছেন ভিন্ন পরিচয়। তার বাবা-মা শরণার্থী হওয়া তো দূরের কথা, কখনও ব্রিটেনেই আসেননি। ফারাহর বয়স যখন চার বছর, তখন তার বাবা সোমালিয়ার অস্থিরতায় নিহত হন। সেসময় নির্বাসিত হয়ে মা এবং দুই ভাইকে নিয়ে সোমালিল্যান্ডের বিচ্ছিন্ন রাজ্যে চলে যান তিনি।
অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ী তারকাকে ৯ বছর বয়সে পূর্ব আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসেন অজ্ঞাত এক নারী। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করানোর আশ্বাস দিয়ে বিমানে উঠিয়েছিলেন। তখনই হুসেইন আবদির নাম পাল্টে মোহাম্মদ ফারাহ নামকরণ করা হয়। ওই পাচারকারী নারীর কাছে তখন মোহাম্মদ ফারাহ নামের ভুয়া একটি ভ্রমণ নথিও ছিল।
ব্রিটেনে আসার পর ফারাহকে ‘খাবারের লোভে’ বাসার কাজ এবং বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়। তখন ফারাহকে বলা হতো, ‘যদি তোমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাও, তাহলে কিচ্ছু বলো না। সেসময় প্রায়ই নিজেকে বাথরুমে আটকে রেখে কাঁদতাম।’
জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে ফারাহ পেরিয়ে এসেছেন অনেকটা পথ। ব্রিটিশদের হয়ে জিতেছেন স্বর্ণ। ছেলেমেয়েদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এতদিন পর সামনে এনেছেন রূঢ় সেসব বাস্তবতার গল্প। সব ছেড়েছুঁড়ে আবার উঠে দৌড়ানোর লক্ষ্যে নিজের সব কথা সামনে এনে হালকা হয়েছেন, এমনই বলেছেন হুসেইন আবদি তথা মোহাম্মদ ফারাহ।