চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ওড়িশা ট্রেন দুর্ঘটনা: বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কথা

ভারতের ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস নামক যাত্রীবাহী রেল দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ না হলেও ধারণা করা হচ্ছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যে করমণ্ডল যাত্রীবাহী ট্রেন একটি মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয় এবং একই সময় যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট আরেকটি ট্রেন লাইনচ্যুত কোচগুলোর সাথে ধাক্কা খায়।

তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮০ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ৯০০ জনেরও বেশি।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি স্থানীয় গ্রামবাসী যারা দুর্ঘটনাটি দেখেছিল এবং আহত ট্রেন যাত্রীদের সাথে কথা বলে ঘটনার বিষদ তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে।

মুকেশ পণ্ডিত:

 

আমি ট্রেনে ছিলাম। হঠাৎ করে বজ্রপাতের শব্দ হল এবং ট্রেনটি উল্টে গেল। আমি আটকা পড়ার আধা ঘণ্টা পর স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে।

আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল যা পরে খুঁজে পাইনি। আমি বাইরে এসে মাটিতে বসলাম। আমার গ্রাম থেকে আসা চারজন যাত্রী বেঁচে গেছে কিন্তু অনেক লোক আহত বা নিখোঁজ রয়েছে।

আমি যে কোচে যাচ্ছিলাম তাতে অনেক লোকই মারা গেছে। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে আনা হয়েছে।

ঋত্বিক কুমার:

 

আমার ভাই সিটে বসে ছিল এবং আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

ট্রেনটি উল্টে গেলে আমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। আমি ভেবেছিলাম আমার ভাইও পালিয়ে যাবে, কিন্তু তা হয়নি। সে ভেতরে আটকে পরে।

আমি ধ্বংসস্তূপের কাছে দৌড়ে গিয়ে তাকে এবং তার সাথে আটকে পরা একটি মেয়েকেও বের করে নিয়ে আসি।

আমি পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তারা আসতে আধা ঘণ্টা সময় নেয়।

গিরিজা শংকর রথ:

মালবাহী ট্রেনটি অন্য একটি লাইনে ছিল। হঠাৎ করেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়।

একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেনটি ছিল শালিমার এক্সপ্রেস। এটি পেছন থেকে  লাইনচ্যুত কোচগুলোর সাথে ধাক্কা খায়। এরপর বিকট শব্দ হল এবং চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল।

সাথে সাথে বিশৃঙ্খল তৈরি হয় এবং লোকেরা চারদিকে দৌড়াতে শুরু করে। আমি লাইনের কাছাকাছি ছিলাম এবং ঘটনাস্থলে দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আটকে পড়া কয়েকজন যাত্রীকে বের করতে শুরু করি। আমরা বেঁচে থাকা কয়েকজনকে বের করতে পেরেছি এবং কিছু লাশও উদ্ধার করেছি।

অনেক আহত মানুষ ছিল। আমরা জানতাম না কীভাবে তাদের বের করে আনব। উদ্ধারকর্মীরা আসার পর ব্যাপারটা একটু সহজ হয়ে যায়। সারারাত ধরেই চলে এই কাজ।

টুটু বিশ্বাস:

 

আমরা একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি বাইরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি দেখলাম মালবাহী ট্রেন অন্য ট্রেনের ওপরে উঠে গেছে।

আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি বহু মানুষ আহত এবং বহু মানুষ মারা গেছে। একটি ছোট শিশু কাঁদছিল যার বাবা-মা সম্ভবত মারা গেছে। সেই শিশুটিও কিছুক্ষণ পর মারা যায়।

অনেকেই এখানে পানি চাইছিলেন। যতটা সম্ভব মানুষকে পানি দিয়েছি। আমাদের গ্রামের লোকজন এখানে এসে সাধ্যমতো মানুষকে সাহায্য করেছে।