‘টাইমড-আউট’ আইনসিদ্ধ হলেও বিশ্বকাপের ময়দানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবার আউটটি দেখল বিশ্ব। ক্রিজে এসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খেলার জন্য প্রস্তুত হতে পারেননি শ্রীলঙ্কান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনে নিয়ম অনুযায়ী আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লঙ্কান অলরাউন্ডারকে। ঘটনার পর থেকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, সাবেকদের শোরগোল।
লঙ্কানদের হয়ে এই ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছেন চারিথ আসালাঙ্কা। ইনিংস শেষে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ম্যাথুজের আউটকে ক্রিকেটের চেতনা পরিপন্থী বলেছেন তিনি। একই মন্তব্য করেছেন ধারাভাষ্যকক্ষে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াকার ইউনুস। মানতে পারছেন না ডেল স্টেইন, গৌতম গম্ভীর ও রমিজ রাজার থেকে আতহার আলী খান।
ওয়াকার বলেছেন, ‘এটা ক্রিকেটের চেতনার পরিপন্থী। বিষয়টি অনুভব করতে পারছি। এই ম্যাচে এটি একটি বড় মুহূর্ত। সাকিব অবশ্যই আপিল করেছে। না হয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। এখানে আপিল করাটাই উচিত হয়নি। কারণ তিনি মাঠে ছিলেন এবং তার হেলমেটে যদি সমস্যা হয়ে থাকে, তাকে তা ঠিক করতে দেয়া উচিত ছিল। অতিরিক্ত ২-৩ মিনিট কোনো পার্থক্য করতে পারে না। আমাকে বলতেই হবে, এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়।’
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খানও ওয়াকারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হওয়া ব্যাটারদের দায়িত্ব। নিয়ম শেখা এবং নিয়মের চেতনা বোঝা ক্রিকেটারদের একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় দায়িত্ব। তবে এ ঘটনার পর শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই আরও একটু বেশি আবেগ ও রাগ নিয়ে খেলবে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবস্থান জানিয়েছেন সাউথ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেইন। বলেছেন, ‘এটা ভালো কিছু হল না।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার মার্ক ওয়াহ লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের আইন ও চেতনা ভুলে যান। একজন ন্যায্য মনের ক্রিকেটার কীভাবে এই আউটের জন্য আপিল করার কথা ভাবতে পারেন, আউটটি তো পরের ব্যাপার।’
ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর বলেছেন, ‘এটি করুণ দৃশ্য, দিল্লিতে কী হল আজ!’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুব্রামানিয়াম বদ্রীনাথ একটু কড়া মন্তব্যই করেছেন। বলেছেন, ‘সাকিবের জায়গায় আমি হলে একজন অধিনায়ক হিসেবে কখনও এমন আবেদন করতাম না। ম্যাথুজের স্থানে আমি হলে হেলমেট ব্যতীত বাকী সব ভেঙে ফেলতাম।’
ঘটনা ম্যাচের ২৫তম ওভারের। দ্বিতীয় বলে সামারাবিক্রমাকে আউট করেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। পরে ব্যাট করতে নামেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। যার কিছুক্ষণ পর কোনো বল না খেলেই টাইমড-আউট হয়ে ফিরে যেতে হয় লঙ্কান অভিজ্ঞ তারকাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড-আউট হয়ে ক্রিজ ছাড়েন ম্যাথুজ।
সতীর্থের আউটের পর ঠিকঠাক সময়েই মাঠে এসেছিলেন ম্যাথুজ। একসময় ব্যাট করারও প্রস্তুতি নেন। হেলমেট আঁটসাঁট করতে ফিতায় টান দেন ব্যাটিং পজিশন নেয়ার আগে। তখন হেলমেটের ফিতার একপাশ ছিঁড়ে যায়।
ম্যাথুজ তখন ড্রেসিংরুমের দিকে নতুন হেলমেটের ইঙ্গিত করেন। মাঠ আম্পায়ারকে বলেন যে ভুল হেলমেট নিয়ে ঢুকে পড়েছেন, ফিতা ছেঁড়ার বিষয়টি অবগত করেন। ড্রেসিংরুম থেকে এক সতীর্থ ম্যাথুজের জন্য আরেকটি হেলমেট নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন। সেই সময় সাকিব টাইমড-আউটের আবেদন জানান মাঠ আম্পায়ারের কাছে। আম্পায়ার নিয়ম মেনে ম্যাথুজকে আউট ঘোষণা করেন।
এমসিসির ক্রিকেট আইনের ৪০.১.১ ধারা অনুযায়ী ‘টাইমড-আউট’র ব্যাপারে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটার ক্রিজে এসে যদি ৩ মিনিটের মধ্যে কোনো বল মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত না হন, তবে তিনি টাইমড-আউট হবেন। সেই নিয়মে ম্যাথুজকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় কোনো বল না খেলেই।
তবে আইসিসির বিশ্বকাপ নীতিমালায় বলা হয়েছে, টাইমড-আউটের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে নতুন ব্যাটার মাঠে আসার ২ মিনিটের মধ্যে। আম্পায়াররা যখন ম্যাথুজকে আউটের সিদ্ধান্ত দেন, ততক্ষণে বয়ে যায় প্রায় ৫ মিনিট। যার মধ্যে আম্পায়াররা লঙ্কান তারকাকে আউট দিতে প্রায় এক মিনিট সময় ব্যবহার করেছেন।
ম্যাথুজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড-আউট হলেও ঘটনাটি নতুন নয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এপর্যন্ত ৬বার টাইমড-আউট হওয়ার ঘটনা আছে।