চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

রাত পোহালেই বিশ্বকাপ উৎসবের দামামা

রাত পোহালেই অপেক্ষার শেষ, দুপুর গড়াতে গড়াতে বাজবে ক্রিকেট উৎসবের দামামা। প্রস্তুতি ম্যাচে গা গরম শেষে ১০ দেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে সর্বস্ব ঢেলে দিতে নামছে। প্রাকৃতিক ও জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে এবারের বিশ্বযজ্ঞ। ১৪৩ কোটিরও অধিক জনসংখ্যার দেশটিতে মিলবে নতুন বা পুরনো কাউকে নতুন করে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখার মহাযজ্ঞ। আশার ফানুস উড়িয়ে দেশছাড়া সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ নামবে পর্দা ওঠার দুদিন পর।

১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া ছেলেদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ যাত্রাপথে পার করেছে ৪৮ বছর। ত্রয়োদশ আসরে একসময় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমবারের মতো নেই টুর্নামেন্টে। একসময়ের ভীতি জাগানিয়া দুবারের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবীয়রা এবার বাছাইপর্বই উতরাতে পারেনি।

অংশগ্রহণকারী ১০ দলের মধ্যে পাঁচটিই এশিয়া মহাদেশের। ২৪ বছর আগে প্রথমবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করা বাংলাদেশের সঙ্গে আছে স্বাগতিক ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। রয়েছে জায়ান্ট ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। বাছাইয়ের বাধা ডিঙিয়ে নেদারল্যান্ডসও আসরে থাকছে।

উইজডেন ক্রিকেটের অক্টোবরের সংখ্যায় বলা হয়েছে, সেমিফাইনালে যাওয়ার দৌড়ে থাকবে বাংলাদেশ। ২০২০-২০২২ সালের মধ্যে লাল-সবুজের দল ৩০টি ওয়ানডের মধ্যে ২১টিতে জিতেছে। সাফল্যের হার ৭০ শতাংশ।

যদিও টাইগারদের ফর্ম চলতি বছর প্রত্যাশিত মতো নয়। মাঠের বাইরের ঘটনায় দেশের ক্রিকেটাঙ্গন আলোচনার ঝড় থেকেছে তুঙ্গে। তামিম ইকবাল অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফিরে আসা, এলেও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি। মাসখানেক আগে অধিনায়কত্ব পাওয়া সাকিবের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার, টক অব দ্য টপিক ছিল অনেককিছুই। যদিও বাংলাদেশ ওয়ানডে ফরম্যাটে শক্তিশালী দল। খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতেই পারে!

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিষেক। পরে পাঁচটি সংস্করণে শুধুমাত্র ২০১৫ সালে একবার নকআউট পর্বে পৌঁছেছিল। সে আসরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কেটেছিল টিম টাইগার্স। ২০০৭ ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

ক্রিকেটের জনক হলেও ইংল্যান্ডকে শিরোপা জিততে ৪৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়ে ইংলিশরা ট্রফি জেতে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দলটি তিনবার রানার্সআপ হয়েছে। সেমিফাইলিস্ট ছিল একবার। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধরণ বাজবল কৌশলে ট্রফি ধরে রাখার যোগ্য দাবিদার জস বাটলারের দল।

নিউজিল্যান্ড বরাবর শক্তিশালী দল হলেও শিরোপা তাদের অধরা থেকে গেছে। টানা দুবারের ফাইনালিস্টরা গত আসরে সুপার ওভারে হারের বেদনায় পুড়েছিল। বিশ্বকাপে সর্বাধিক আটবার কিউইরা খেলেছে সেমিফাইনালে, যার শেষ দুবার পৌঁছায় শিরোপার মঞ্চে। লিগামেন্টের ইনজুরি থেকে অনেকটা সেরে ওঠা কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্ল্যাক ক্যাপসদের।

দুবারের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত ঘরের মাঠে শিরোপা জয় ছাড়া কিছুই ভাবছে না। শক্তিশালী ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং দলটিকে করেছে ভারসাম্যপূর্ণ। তিন ফরম্যাটেই র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা টিম ইন্ডিয়া কাগজে-কলমে হট-ফেভারিট। ১১ বছর বৈশ্বিক আসরে চ্যাম্পিয়ন না হওয়ার অপূর্ণতা ঘোচাতে চায় রোহিত শর্মার দল।

প্রতিযোগিতার রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবারো শক্তিশালী দল নিয়ে এসেছে। প্যাট কামিন্সের দলের সবদিকেই রয়েছে ভারসাম্য। সম্প্রতি ভারতের মাটিতে তাদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খেলা অজিদের জন্য হয়েছে সেরা প্রস্তুতির অংশ।

সাউথ আফ্রিকাকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছেন না অনেকেই। ব্যাটিং অর্ডার শক্তিশালী হলেও দলগত পারফরম্যান্সে খানিকটা পিছিয়ে প্রোটিয়া দল। পেস আক্রমণের অন্যতম ভরসা এনরিখ নর্টজে ও সিসান্দা মাগালার ছিটকে যাওয়া দলটির জন্য বড় ধাক্কা। বর্ণবাদের দায়ে ২১ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৯৯২ বিশ্বকাপে প্রথম অংশ নেয় সাউথ আফ্রিকা। চারবার শেষ চারে খেললেও ফাইনালের টিকিট হাতে নিতে পারেনি। তীরে এসে তরী ডোবার তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকা দলটির গায়ে লেগে যায় চোকার তকমা।

আন্ডারডগ হয়েও ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেটে উত্থান-পতনের সাক্ষী হওয়া দলটিকে এবার খেলতে হয়েছে বাছাইপর্বে। সম্প্রতি লঙ্কানরা এশিয়া কাপের ফাইনালে খেললেও তাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক কমই। তারকা স্পিনার ভানিডু হাসারাঙ্গার চোটের কারণে ছিটকে যাওয়াটা হয়েছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ভারতের মাটিতে খেলতে যাওয়াটা পাকিস্তানের ছিল অনিশ্চিত। ভিসা পেতে দলটিকে করতে হয়েছে বাড়তি অপেক্ষা। সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাবর আজমের দল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের দেশে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে। পেসার নাসিম শাহ চোটের জন্য স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়াটা ধাক্কা হলেও সামর্থ্যের বিচারে পাকিস্তানকে অনেকেই ট্রফি জয়ের সমীকরণে রাখছেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপে আন্ডারডগ দল হয়েও শিরোপা জেতা দলটির শক্তিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন নেই বিশ্লেষকদের।

২০১৫ সালে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় আফগানিস্তান। ২০১৯ সালেও ছিল অংশগ্রহণে। গ্রুপপর্বের বাধা না পেরলেও তাদের দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মাঠের পারফরম্যান্সের উন্নতি সবার নজরে আছে। অঘটন ঘটানোর সামর্থ্য দলটির রয়েছে।

বাংলাদেশেরও আগে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে যায় নেদারল্যান্ডস। পঞ্চমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে খেলতে আসা দলটি গ্রুপপর্ব পার হতে না পারলেও জায়ান্ট কিলার হিসেবে নিজেদের আগ্রহী করে তুলতে পেরেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে চমক দেখিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। সাড়ে তিন শতাধিক রান ছুঁয়ে গ্রুপপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল সুপার ওভারে। শেষে স্কটিশদের হারিয়ে নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ডাচ কোচ রায়ান কুকের বিশ্বাস, ডাচরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে অঘটনের জন্ম দিয়ে সেমিফাইনালে উঠতে পারে।

এবারের বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো হল- ধর্মশালা, দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, কলকাতা, আহমেদাবাদ, মুম্বাই, পুনে, হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরু।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে। ১৯ নভেম্বর ফাইনাল মহারণ। ধর্মশালায় ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ।

১০ ভেন্যুতে টুর্নামেন্টে মোট ৪৮ ম্যাচ হবে, যার মধ্যে ৪৫টি গ্রুপপর্বের। গ্রুপপর্বে প্রতিটি দল একে-অপরের বিপক্ষে খেলবে। গ্রুপপর্ব শেষে সরাসরি সেমিফাইনাল। এরপর ফাইনাল। এমন ফরম্যাটের বিশ্বকাপ ১৯৯২ ও সবশেষ ২০১৯ সালে হয়েছিল।

রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতি হওয়ায় প্রতিটি দলকে বাকি ৯ প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে। নকআউট বাদে প্রতিটি দলকেই খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ।

নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিল জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর, টুর্নামেন্টের আগেরদিন ৪ অক্টোবরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বাতিল করেছে বিসিসিআই।

১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুদলের লড়াইয়ের আগে ম্যাচের ভেন্যুতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ভাবছে বিসিসিআই।

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View