আসছে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বড়পর্দায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে বছরের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘নোনাজলের কাব্য’। সাধারণ দর্শকের আগে গত সোমবার ছবিটি দেখলেন যাদের নিয়ে, যাদের গল্পে নির্মিত হয়েছে ছবিটি! অর্থাৎ দেশের মধ্যে জেলে পাড়ার মানুষেরাই সবার আগে দেখলেন ‘নোনাজলের কাব্য’।
নির্মাতা সূত্রে জানা যায়, সোমবার গঙ্গামতীর চর এবং জেলেপল্লী কুয়াকাটা পিকনিক স্পট-এ দুটি প্রদর্শন হয় ‘নোনা জলের কাব্য’র। নিজেদের গল্প নিয়ে তৈরি এই ছবি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন জেলে পরিবারের ১২০০ সদস্য।
প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছবির পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, অভিনেতা তাসনোভা তামান্না ও অন্যান্য কলাকুশলী। প্রদর্শনীর কয়েকটি ছবি শেয়ার করে ‘নোনাজলের কাব্য’ থেকে জানানো হয়, আড়াই বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ‘নোনা জলের কাব্য’ ফিরে এলো নিজ এলাকায়, সবার আগে ছবিটি দেখলেন জেলে ভাই বোনেরা!
নির্মাতা বলেন, ‘নোনাজলের কাব্য’ জেলে পাড়ার ছবি, জেলে ভাইবোনদের নিয়ে নির্মিত ছবি। আর তাই, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি সোমবার ছবিটি সাধারণ দর্শকদের আগে প্রদর্শিত হয় জেলে পাড়ার ভাই বোনদের জন্য়। গঙ্গামতীর চরেই শুটিং হয়েছিল ছবিটির। তাই প্রদর্শনীতে নিজেদের গল্প বড় পর্দায় দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন চরবাসী। ছবি দেখা শেষে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা জেলে প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন নিজেদের সুখদুঃখের গল্প।
সুমিত তার ফেসবুকে লিখেন, ‘কী অদ্ভূত সুন্দর সেই মুহূর্তগুলো! কিছুতেই ভুলতে পারছি না। এই ছবিগুলো আমি সারা জীবন মনের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখবো। গঙ্গামতির চরের জেলে ভাইদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতন নয়। আড়াই বছর আগে এই চরেরই একটি জেলে পাড়ায় আমার ছবির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। জেলে পাড়াটির এখন আর অস্তিত্ব নেই। তাই এতদিন পর নিজেদের সেই প্রতিচ্ছবি, সেই হারিয়ে যাওয়া গ্রামটি বড় পর্দায় দেখতে পেরে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন।’
রাজধানীর আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও ২৬ নভেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের দর্শক সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবেন। ‘ফ্রেশ’ নিবেদিত ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমাটি একযোগে স্টার সিনেপ্লেক্স-এর সবগুলো শাখা, ব্লকবাস্টার সিনেমা (যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা), সিনেমাস্কোপ (নারায়ণগঞ্জ) এবং সিলভারস্ক্রিন (চট্টগ্রাম)-এ সবার জন্য প্রদর্শিত হবে।
গেল মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ‘নোনাজলের কাব্য’র ট্রেলার। প্রায় দুই মিনিটের এই ট্রেলারে সাগর পাড়ের মানুষের সংগ্রাম, জেলেদের কথা, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা। সেই সঙ্গে জেলেদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কারের বিষয়টিও ট্রেলারে দারুণভাবে উঠে আসে।
সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা আগেই জানিয়েছেন, ‘নোনাজলের কাব্য’ চলচ্চিত্রে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলেদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তিতাস জিয়া, তাসনুভা তামান্না, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, অশোক ব্যাপারি, আমিনুর রহমান মুকুল, রোজি সিদ্দিকী এবং দুলারি তাহিম চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সিনেমার আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব। এরইমধ্যে তার গাওয়া একটিও গানও উন্মুক্ত হয়েছে, পাচ্ছে প্রশংসাও।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়াও ‘নোনাজলের কাব্য’ বুসান, লন্ডন ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে, এবং প্রশংসিত হয়েছে।
ছবি: নির্মাতা সুমিত ও ‘নোনাজলের কাব্য’র ফেসবুক পেজ থেকে