রঙিন পোশাকের ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের নাস্তানাবুদ করে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে টিম টাইগার্স।
নেপিয়ারে শনিবার টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা লাল-সবুজের দলের বোলাররা ব্ল্যাক ক্যাপসদের ৩১.৪ ওভারে মাত্র ৯৮ রানেই অলআউট করে। জবাবে বাংলাদেশ ১৫.১ ওভারে মাত্র এক উইকেট খুইয়ে জয়ের বন্দরে পা রাখে।
কিউইদের মাটিতে এর আগে ১৮টি ওয়ানডেতে সফরকারীরা একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি। ১৯তম ম্যাচে এসে সেই ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে টাইগাররা পেয়েছে সফলতা।
নতুন বলে শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব রীতিমতো ঝলসে উঠেছিলেন। কিউই ব্যাটারদের তারা থিতুই হতে দেননি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পর জাতীয় দলের হয়ে বোলিংয়ে জুটি গড়া এই দুই পেসারের রসায়নটা ছিল চমৎকার। শেষের দিকে বল হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখান সৌম্য সরকার।
দলীয় ১৬ রানে কিউইরা প্রথম উইকেট হারায়। তানজিম সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮ রান করা রাচীন রবীন্দ্র। এক রানের বেশি করতে পারেননি হেনরি নিকোলস। মিড অনে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে তানজিমের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।
শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেটে ৩৬ রান যোগ করেন ওপেনার উইল ইয়াং ও টম ল্যাথাম। এরপর বাংলাদেশকে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। ২১ রান করা কিউই অধিনায়ক ল্যাথামকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান।
ল্যাথামের বিদায়ের পর নিউজিল্যান্ডের ইনিংস তাসের ঘরের মতো ভাঙতে শুরু করে। দলের হয়ে সর্বাধিক ২৬ রান করা ইয়াং গালি অঞ্চলে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের তালুবন্দি হন। এরপর মার্ক চ্যাপম্যানকে ড্রেসিং রুমে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেটের দেখা পান শরিফুল। উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলের ক্যাচও নেন মিরাজ। এ যাত্রায় তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তানজিম সাকিব।
আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা সৌম্য সরকার বল হাতে নিয়ে স্বাগতিকদের টেল এল্ডারদের দুমড়ে মুচড়ে দেন। জস ক্লার্কসন, অ্যাডাম মিলনে ও ওয়ানডে অভিষিক্ত আদিত্য অশোককে তিনি সাজঘরে ফেরত পাঠান।
উইলিয়াম ও’রোর্ককে বোল্ড করে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯৮ রানেই আটকে দেয়ার শেষ কাজটুকু সারেন মোস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ৪০ রান যোগ করতেই কিউইরা শেষ ৮ উইকেট হারায়।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৭ ওভারে দুই মেডেনসহ ১৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে টাইগারদের হয়ে সফলতম বোলার তানজিম সাকিব। তিনিই পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার। শরিফুল ৭ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। সৌম্য ৬ ওভারে এক মেডেনসহ ১৮ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট পকেটে পুরেন।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় কিউই পেসারদের গতি আর বাউন্স সামলে নিচ্ছিলেন এনামুল হক বিজয় ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে চোখের সমস্যায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ১৬ বলে ৪ রান করা সৌম্য। পরে তিনি আর ব্যাটিংয়ে নামেননি।
তিনে নামা অধিনায়ক শান্ত আস্থার সঙ্গে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। বিজয়ও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বাইশ গজে এ দুই ব্যাটার গড়েন ৬৯ রানের জুটি।
১০ উইকেটে জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও বিজয় আউট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ৩৩ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করে ডানহাতি ব্যাটার ও’রোর্কের বলে ব্লান্ডেলের গ্লাভসবন্দি হন। দলীয় স্কোর তখন ছিল ৮৪। জয় থেকে বাংলাদেশ তখন মাত্র ১৫ রান দূরে।
লিটন দাস ক্রিজে নামলেও তাকে দুই বলের বেশি খেলতে হয়নি, করেন এক রান। অভিষিক্ত আদিত্যের বলে দৌড়ে দুই রান নিয়ে জয় নিশ্চিতের পাশাপাশি ফিফটিও তুলে নেন শান্ত। টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ৪২ বলে ৮ চারে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন।