নিউজিল্যান্ডে ঘূর্ণিঝড় গাব্রিয়েল একের পর এক আঘাতের ফলে ঘর ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাড়িতে আবার ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে।
গত মাসে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে আঘাত হানার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১১ জনের প্রানহানি এবং কমপক্ষে ১০,০০০ জন গৃহহারা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই দুর্যোগ সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করেছে। ঘূর্ণিঝড় এবং এর ফলে সৃষ্ট বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণ বা ভেঙ্গে ফেলা উচিত কিনা তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।


দেশটিতে বসবাসকারী দুই সন্তানের জননী হকস বলেন, তিনি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় থাকতেন, বিশাল বেগে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় তার বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ৫০ জন আক্রান্ত প্রতিবেশীর সাথে তিনি দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ, পানি এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ছাড়া কাটিয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর তিনি সাহায্য চেয়ে কল করতে সক্ষম হন।
এরপর প্রতিবেশীর বাড়ির উঠোন থেকে একটি হেলিকপ্টার তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি পাশের শহর নেপিয়ারে তার মায়ের বাসায় আছেন। বাড়ি ফিরে যাবার বিষয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে বলেন, “আমার মনে হয় যদি আমরা তৃতীয়বার বন্যায় পড়ি, তাহলে সেটা আমাদেরই দোষ।”

ফিরে আসার ভয়ে তিনি একা নন। নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই দুর্যোগের কারণে তাদের সমস্ত সম্পত্তি হারিয়েছে। তারা এখন বিশ্বাস করে, যেখানে তাদের ঘরবাড়ি সেখানে আবার ফিরে যাওয়া তাদের জন্য বিপজ্জনক।
নিউজিল্যান্ডের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জেমস শ দুর্যোগের মাত্রার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। বিবিসির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অনেক বাড়ির মালিকই টোটাল রিপ্লেসমেন্ট বীমা পলিসি নিয়েছেন, যা তাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে, যা শুধুমাত্র সম্পত্তির খরচ হস্তান্তর করে জমির মূল্য নয়। আর তাই আগের জমিতেই বাড়ি পুনর্নির্মাণ করতে হবে ভেবে তারা সত্যিই ভীত।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অকল্যান্ডের প্রায় ৫৫,০০০ বাড়ি বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। সারা দেশে আরও ৭৬,০০০ বাড়ি উপকূলীয় এলাকায় আছে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাস্তুচ্যুত পশ্চিম অকল্যান্ডের বাসিন্দা মরগান অ্যালেন বলেন, “লোকেরা দরজার পাশে লাইফজ্যাকেট নিয়ে ঘুমায়, এটা ভয়াবহ।” তিনি বলেন, “আমাদের শহর এই সমস্ত জল স্পঞ্জ করার ক্ষমতা হারিয়েছে।”
নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চ অনুসারে, ২১০০ সালের মধ্যে দেশটিতে আরও বেশি বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটবে এবং আঞ্চলিক ঘূর্ণিঝড়গুলি আরও ঘন ঘন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলের একটি আপেল বাগানের মালিক ব্রাইডনের বাগানটি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার এলাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি কেবলই একটি বিপর্যয় অঞ্চল।” দুর্যোগের তিন দিন পর্যন্ত ঘরে ফিরতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, “সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। পানি উঠে গেছে ঘরের প্রায় তিন থেকে চার মিটার পর্যন্ত।”

ঘূর্ণিঝড় এবং অকল্যান্ড বন্যাপরবর্তী দিনগুলোর জন্য সরকার ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলিতে ৩০০ মিলিয়ন নিউজিল্যান্ড ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে৷
নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল সবচেয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গত মাসে এই দুর্যোগের কারণে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করা হয় যা গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।