আবারও সংগঠিত হয়ে হামলার পরিকল্পনা করছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। এরইমধ্যে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটির আমির মাহাদী হাসান জন তুরস্কে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর দেশে সংগঠনের নেতৃত্বে আসে মো. ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুরকে দীর্ঘ নজরদারীর পর তার সহযোগী মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহিরসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
রাজধানীর ডেমরা এলাকায় গোপন বৈঠকের তথ্য পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। সেসময় নব্য জেএমবির মুখপাত্র ‘নাবা’ পত্রিকা , ১০ টি ডেটোনেটর, বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। আর সবচেয়ে কালো অধ্যায় হলি আর্টিজানসহ অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটায় এই সংগঠনটি। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির সব নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সাঁড়াশি অভিযানের পর নেতৃত্বপর্যায়ের প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তারের পর মনে করা হয়েছিল নব্য জেএমবি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। কিন্তু সংগঠনের পরবর্তী আমির মাহাদী হাসান জন বিদেশে বসে দলকে আবারো সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে তুরস্ক পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার অনুসারী কয়েকজনকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটা দেশে শনাক্ত করা হয়। আমাদের ধারাবাহিক তৎপরতায় গত প্রায় তিন মাসে দেশে অন্তত ৭-৮ জন অনুসারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাদের নেতা ইউসুফ। তিনি সংগঠনে ইউসুফ হুজুর নামেই পরিচিত ছিলেন। অবশেষে ইউসুফ ও তার সহযোগী জহিরুল ইসলাম জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা যখন ইউসুফের বিষয়ে তথ্য পাই, তখন খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় ইউসুফ ও আবু বকরকে একসঙ্গে ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার করেছিল সিটিটিসি। সে সময় ইউসুফ হুজুর ছিলেন নেতা আর আবু বকর ছিলেন সংগঠনের অপারেশনাল কমান্ডার।
২০১৯ সালে জামিনে বেরিয়ে ইউসুফ সৌদি আরবে চলে যান। মাহাদী তুরস্কে অবস্থান করছিলেন। আগে থেকেই তার সঙ্গে ইউসুফের যোগাযোগ ছিলো। মাহাদী বিদেশে বসে সংগঠনকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি অনলাইনে এ দেশের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। তুরস্কে মাহাদীর গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়াটি টের পেয়ে ২০২২ এর মাঝামাঝি সময়ে ইউসুফ দেশে ফিরে আসেন।
মাহাদী তুরস্কে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইউসুফ সংগঠনের দায়িত্ব নেন। এরপর ইউসুফের নেতৃত্বে অপারেশনাল পরিকল্পনা করতে থাকে দলটি। ১১ নভেম্বর সংগঠনের অপারেশনাল কমান্ডার আবু বকরকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। পূজায় তাদের বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল। সে সময় আবু বকরের ডিভাইস থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে পূজায় ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় সন্ত্রাসী হামলার কবল থেকে রক্ষা পায় দেশ।
তিনি আরও বলেন, মাহাদীর তুরস্কে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এ অধ্যায়ের সমাপ্তি ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ইউসুফ দেশে এসে কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। এরইমধ্যে অনেককে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্তে আমরা কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউসুফ নিজেই স্বচ্ছল, তার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ছিলো। ২০১৭ সালে গ্রেপ্তারের আগে শিক্ষকতা করতেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে বেশকিছু টাকা উপার্জন করে দেশে ফিরে বড় ব্যবসা শুরু করেন। তার লাভের টাকা পুরোটাই সংগঠনে বিনিয়োগ করতেন তিনি।
মাহাদীর তুরস্কে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব সূত্রে তাকে শনাক্ত করেছি, তার বাসার ঠিকানাসহ দিয়েছি। যে দোকানে বসে বাংলাদেশে যোগাযোগ করতো সেই ছবিও আমরা দিয়েছি। মাহাদী বর্তমানে জামিনে থেকে সার্ভিলেন্সে রয়েছেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য আমরা আবেদন করেছি, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
থার্টিফার্স্টে হামলার কোন পরিকল্পনা ছিলো কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এরকম কৃষ্টি কালচারে বিশ্বাস করেনা, যখন অ্যাকটিভ ছিলো তখন এ ধরনের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা করেছে। তাদের একটা পরিকল্পনা হয়তোবা ছিলো, কারণ তাদের কাছ থেকে ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। থার্টিফার্স্ট নাইটের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা মনে করিনা হামলার কোন হুমকি রয়েছে। নির্বাচনেও জঙ্গি হামলার কোন আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেন সিটিটিসি প্রধান।