শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে আমরা কবীর চৌধুরীর শূন্যতা বেশি করে অনুভব করি। কবীর চৌধুরী থাকলে নিশ্চয়ই এদের শক্ত হাতে প্রতিহত করতেন। তার অনুপস্থিতিতে আমাদেরই শক্ত হাতে রুখতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত স্মারক বক্তৃতা, আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবীর চৌধুরীর বক্তব্য মুগ্ধ হয়ে শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বিদেশি সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালি পাঠককে পরিচিত করে দিয়ে গেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই মৌলবাদীরা ’৫৪ নির্বাচনে বলেছিল ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে’। বর্তমানেও তারা আওয়ামী লীগকে রুখতে নানা রকম মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে। এ সমস্ত অসাম্প্রদায়িক-মৌলবাদীদের পুনর্বাসন করেছিল জিয়াউর রহমান। তারা আজকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বর্তমান পাঠ্যসূচি সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোন ভুল থেকেই থাকে তাহলে এর গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তারা তা তুলে ধরুক-যেন আমরা তা সংশোধন করতে পারি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি মৌলবাদীরা এই বিষয়টিকে ইস্যু করে মিথ্যাচার করছে এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। এমনকি তারা সম্পাদকমণ্ডলীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এদেরকে অবিলম্বে প্রতিহত করতে হবে।’
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি যাত্রাভিনেতা, পালাকার ও নির্দেশক মিলন কান্তি দে, সুরের ধারার সভাপতি সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
সভাপতির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৯২-এর জানুয়ারিতে আমরা যখন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করি তখন বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই ছিলেন ১০১ জন প্রতিষ্ঠাতার তালিকায়, তবে এদের সকলেই যে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন কথা বলা যাবে না। শহীদজননী জাহানারা ইমাম প্রবীণ যাদের প্রতিনিয়ত পাশে পেয়েছেন তাদের ভেতর অগ্রগণ্য দুটি নাম হচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের দুষ্কর্ম অনুসন্ধানের জন্য জাতীয় গণতদন্ত কমিশন। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ছিলেন গণআদালতের বিচারক। জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের জন্য গঠিত এই গণআদালতের ১২ সদস্য বিশিষ্ট বিচারকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ছিলেন জাহানারা ইমাম।
স্মারক বক্তৃতার প্রারম্ভে আরণ্যক নাট্যদলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী নাটকের অনুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি একাধারে যেমন জাতীয় অধ্যাপক, সাহিত্যিক ছিলেন তেমনি ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। তিনি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন।
আলোচনা সভার পর অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সাইফউদ্দিন রুবেল পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘নাই বা হলো পারে যাওয়া’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।