ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে সমকামি তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত একটি চক্র। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫)। এরপর চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহৃত হন। পরে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে লাশ গুম করে চক্রটি।
ঘটনার দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার ১৭ মে ঢাকা ও নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ থেকে চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০)।
বৃহস্পতিবার ১৮ মে দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
তিনি জানান, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগমের বাসায় ওঠেন।
এরপর ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে ফোন করে অজ্ঞাত ব্যক্তি তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন দক্ষিণখান থানায় ওই দিনই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডির পর থেকে অপহৃত আমিরকে উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর উল্লেখ করে ডিসি বলেন: তাদেরকে শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার ১৭ মে দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার তারেকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ীর পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দী গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, চক্রের মূল হোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ফেইক ফেসবুক আইডি ছিল। এই আইডি দিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতো।
যারা তার প্রস্তাবে রাজি হত তাদেরকে গাজীপুরের চৌরাস্তা/শ্রীপুর/মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেকে আনত। এরপর মোবাইল টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতে। ঠিক এভাবেই নিহত আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে নেয়।
আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। প্রতাশিত মুক্তিপণ না পাওয়া ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করে। এরপর বস্তায় লাশ ভরে বাসার পিছনে পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যায়।