শেষবার বাড়ি ছাড়ার সময় বাবা বলেছিলেন ‘কিছু অর্জন করতে পারলেই কেবল ঘরে ফিরবে’। এরপর কেটে গেছে ৯ বছর ৩ মাস। মমতাময়ী মায়ের মুখ দেখা হয়ে ওঠেনি বাবার কঠিন শর্ত রাখতে যেতে। তাতে মনের মধ্যে কেবল অভিমানের মেঘই পুষে রাখেননি, তা অগ্নিশিখায় পরিণত করে নিজেকে ভেঙে চুড়ে গড়েছেন নতুন করে। পথে রঞ্জি ট্রফি মাতিয়ে আইপিএলের অন্যতম দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। সেই অর্জনের ডালা সঙ্গী করে অবশেষে ঘরে ফিরেছেন কুমার কার্তিকেয়া সিং। দাঁড়িয়েছেন মায়ের সামনে। এভাবেই বাবাকে দেয়া কথা রেখেছেন ভারতের ২৪ বর্ষী ক্রিকেটার।
অভিমান ভুলে বুধবার মায়ের সাথে দেখা করেছেন কার্তিকেয়া, দীর্ঘ ৯ বছর ৩ মাস পর। টুইটারে মায়ের সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে সবাইকে জানিয়েছেন সেকথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা নজর কেড়ে চলেছে।
‘৯ বছর ৩ মাস পর পরিবার ও মায়ের সাথে দেখা। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
ব্যস্ত ক্রিকেট সূচিতে এমনিতেই খুব একটা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেন না ক্রিকেটাররা। সময় পেলেই তাই ছুটে যান পরিবারের কাছে। সেখানে কার্তিকেয়া এই ফেরা যেন রূপকথার গল্প, ভীষণরকম ব্যতিক্রম। ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা নয়, বাড়ি যানটি অভিমানে। আইপিএল চলাকালীনই অবশ্য সেকথা সামনে এনেছিলেন।
‘‘আমার বাড়ি যাওয়ার সময় ছিল। কিন্তু যখন শেষবার বাবার সাথে কথা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন ‘যেহেতু বাড়ি ছাড়ছ, কিছু অর্জন করেই ঘরে ফিরো।’ জবাবে শুধু ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নেড়েছিলাম। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কিছু অর্জন করার পরেই বাড়ি ফিরব।’’
‘ভিডিও কল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কারণ আমার মা কাঁদতেন! তাই কেবল ভয়েস ফোন করেছি। ফোন করলেই তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন। রঞ্জি ট্রফি জেতার পর একবার ভিডিও কল করেছিলাম, এরপর আইপিএলে ডাক পাওয়ার পর।’
২০২১-২২ রঞ্জি ট্রফিতে মধ্যপ্রদেশের হয়ে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন কার্তিকেয়া। মৌসুমে তিন বার পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন। সবমিলিয়ে ১১ ইনিংসে ৩২ উইকেট শিকার করেছেন লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে।
সবশেষ আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি গায়ে জড়ান কার্তিকেয়া। মুম্বাই বোলার আরশাদ খান চোটে পড়ায় সুযোগ পান। অভিষেক ম্যাচেই শিকার করেন রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনের উইকেট। চার ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। তার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের পেছনের মূল কারিগর ছিলেন সঞ্জয় ভরদ্বাজ। সব কৃতিত্ব তাকেই দিয়েছেন কার্তিকেয়া।
‘প্রথম যেদিন তার সাথে দেখা করি, তিনি আমার সকল খরচ, জুতা, জামাকাপড়, ক্রিকেটের জন্য যা যা প্রয়োজন সব দিতে চাইলেন। কাঁদতে লাগলাম এই ভেবে যে দিল্লিতে কে এমন করে? তিনি তাকে আমার বাবা ভাবতে বললেন। শুনে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। দিল্লিতে সবাই আমার কাছ থেকে নিতে চেয়েছিল। ‘‘আমাকে এটা দাও, তোমার জন্য ওটা করব।’’ কিন্তু তিনি কেবল আমাকে দিতে চেয়েছেন। আমার দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্যকেউ তা করেনি। তিনি আমার কাছে সবকিছু।’