নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি রোধসহ হজের খরচ কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। এতে কুরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
বুধবার মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুধবার (২২ মার্চ) ১২টায় ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির এর নেতৃত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি এ বি এম রাকিবুল হাসান ও ঢাকা মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক মো. নেছার উদ্দিন স্মারকলিপি প্রদান করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।
স্মারকলিপিতে, হজ যাত্রীদের প্যাকেজ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা পুনঃনির্ধারণ, পবিত্র রমজান মাসে মজুদদারি, কালোবাজারি বন্ধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং কুরবানীর পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে এখন থেকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

হজ প্যাকেজে বাংলাদেশের সকল ভ্যাট ও ট্যাক্স বাতিল এবং সাধারণ হজ যাত্রীদের খরচ কমানোর স্বার্থে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম ফিসহ সৌদি আরবের অন্য খরচ কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কূটনৈতিক চেষ্টা চালানো, হজের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও রাষ্ট্রের টাকায় হজ করানো বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও হজের খরচ চার লাখ ৫০ হাজার টাকায় পুনঃনির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সব দেশে তুলনামূলকভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশী। ইন্দোনেশিয়া থেকে হজে যেতে তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা, মালয়েশিয়া থেকে দু’লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা থেকে দু’লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা, পাকিস্তান থেকে চার লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা আর ভারতে ২০২১ সালে এই খরচ ছিল বাংলাদেশী মুদ্রায় চার লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। তবে সেদেশের সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, খরচ ৫০ হাজার টাকা কমানো হবে।
সরকার যেখানে ভর্তুকি দিয়ে হজ যাত্রীদেরকে ফরজ ইবাদাত পালনে সহযোগিতা করবে সেক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা দিয়ে হজযাত্রীদের খরচ বৃদ্ধি করেছে। বিচারপতিরা যাকে বলেছেন, ‘অমানবিক হজ প্যাকেজ’।
বাংলাদেশে গত বছর কোরবানি ছাড়া বেসরকারি ‘সাধারণ’ হজ প্যাকেজের সর্বনিন্ম ব্যয় ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। এবারের হজে সেই ব্যয় ধরা হয়েছে কোরবানি ছাড়া ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৪ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬১৮ টাকা। তার সঙ্গে কোরবানির টাকা মিলিয়ে বাড়তি অংক ২ লাখ ছুঁয়ে ফেলবে। এখানে স্পষ্ট এ বছরে একজন হজযাত্রীর খরচ পড়বে কম পক্ষে ৯ লাখ টাকা।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ এর স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অনেক মুসলমান প্রাথমিক নিবন্ধনের পরেও আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে, হজের আকাশচুম্বী খরচের অমানবিক প্যাকেজ নির্ধারণ করার কারণে।
বাংলাদেশীদের হজ পালনের খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৯ শতাংশ। যা তিন বছর আগের খরচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এতে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হজযাত্রীরা বড় চাপের মুখে পড়ছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান হিসেবে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ ২০২৩ সালের হজ প্যাকেজ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পুনঃনির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছে।
বিমানের ভাড়ার নানাদিক তুলে ধরে তারা বলেন, বর্তমানে ওমরাহ পালনে বিমান ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৯৮ হাজার টাকা। আর হজের সময় নেওয়া হবে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ আল্লাহর মেহমানদের থেকে একই দূরত্বে বিমান এক লাখ টাকা বেশি নিচ্ছে। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর জুলুম।
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি এবং আসন্ন কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য বিষয়েও তারা নানা দাবি তুলে ধরেন।