হত্যা, সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গণচিত্রকর্ম প্রদর্শনী হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ১০ দিনব্যাপী প্রতিবাদী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।
এতে বলা হয়, দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নবিরোধী অপশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনৈতিক জোট ও গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সন্ত্রাস ও নাশকতায় নারী ও শিশুসহ দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্য, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগের শিকার হচ্ছে। অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালে, পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের মর্যাদা ও সুনাম। আমরা এই অপরাজনীতির অবসান চাই।
বক্তারা বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বিচারে হাসপাতাল, গাড়ি, ট্রেনসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, পুলিশ সদস্যকে রাস্তার উপর ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে শিল্পী সমাজ কোনোভাবেই এই পৈশাচিক ও অমানবিক ঘটনা মেনে নিতে পারে না। এই ঘটনা শুধুমাত্র বর্বর পাকিস্তানীদের ১৯৭১ সালের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই তুলনা করা যায়।
পেশাজীবী চারুশিল্পীদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ’ এই নাশকতা, গণবিরোধী ও উন্নয়নবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সহায়সম্বলে অগ্নিসংযোগসহ আগুন সন্ত্রাস এবং এসব অপকর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণচিত্রাংকন ও প্রতিবাদী চিত্রকর্মের গণ প্রদর্শনীর এই আয়োজন।
বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অভ্যন্তরে দুপুর ১টায় ১০ দিনব্যাপী প্রতিবাদী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী শিল্পী আনোয়ার হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এছাড়া এ সময় দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চারুশিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীগণ উপস্হিত ছিলেন।
বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সহ-সভাপতি সংগঠক ও রাজনীতিক আশরাফুল আলম পপলুর সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, শিল্পী সঞ্জীব দাস অপু, অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র গাইন, শামসুল আলম ইন্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিল্পী মনিরুজ্জামান, শিল্পী মনিরুজ্জামান লিটন, নবেন্দু সাহা নব প্রমুখ। এই প্রদর্শনী আগামীকাল থেকে চারুকলা অনুষদে স্থানান্তর হবে এবং সেখানেই বাকি সময় চলবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী শিল্পী আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায় নি, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, উন্নয়ন অগ্রগতি ব্যাহত করে, যারা বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু বলতে দ্বিধা করে তাদের এদেশের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যারা সংবিধানের আলোকে নির্বাচন না করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্হ করতে চায় আমরা বলতে পারি তারা সংবিধানকে মানেন না এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছেন, দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করছেন যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমাদের দেশের শিল্পীদের ক্যানভাসে সে চিত্রই ফুটে উঠেছে।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা দেশের বিরোধীতা করে, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে, সংবিধানের বিরোধীতা করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে লজ্জা পান, ভয় পান তাদের এ দেশের রাজনীতি করার তা ভেবে দেখা দরকার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনা কমিটির সদস্য শিল্পী ও সংগঠক আশরাফুল আলম পপলু বলেন, শিল্পীরা মানবিক তারা জাতির ক্রান্তিকালে, দুর্যোগ- দুর্বিপাকে, বাঙালির সকল সংগ্রামে, মানুষের প্রয়োজনে সবসময় তাদের পাশে ছিলেন পাশে ছিলেন, তাঁরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের তুলিতে, ক্যানভাসে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে বর্তমান সময়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আন্দোলনে। আজকের এই গণচিত্র প্রদর্শনী তার-ই ধারাবাহিকতার অংশ।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী জামাল আহমেদ বলেন, শিল্পীরা মুখে বলেন না তারা তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে কথা বলেন, দেশের কথা বলেন, বক্তব্য ফুটিয়ে তোলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তারা তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে করেন।
সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ।