কথায় আছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। সাম্প্রতিক এই কথার উজ্জ্বল উদাহরণ যেনো অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন! নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময়ে তিনি আছেন। আর সেটা সম্ভব হয়েছে তার ধৈর্য্য ধারণ ও দৃঢ় মনোবলের কারণেই!
অপেক্ষার ফল বড়ই সুমিষ্ট, সেটা এই মুহূর্তে বাঁধনের চেয়ে আর কেই বা ভালো আঁচ করতে পারছেন! বাঁধন এখন যে সময়ে আছেন, সে সময়টুকু যে কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত, আরাধ্য!
ব্যক্তিগত জীবনের নানা উত্থান পতনের ঢেউ ক্যারিয়ারেও আছড়ে পড়ে, এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দমে গেলেই বিপদ। বাঁধন দমে যাননি, থেমে যাননি। বরং হোঁচট খেয়ে ছুটেছেন আরো দুরন্ত গতিতে। কাজের প্রতি তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আত্মত্যাগ তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের সিঁড়িতে।
বাঙালি দর্শক মাত্রই আর অজানা নয় যে, সম্প্রতি এই অভিনেত্রী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসব মাতিয়ে এসেছেন। যে উৎসবে দেখানো হয়েছে তার অভিনীত ও আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। শুধু কী তাই? এই ছবিটি আরো বেশকিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ- তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীন ও গৌরবময় এই উৎসবে এটিই একমাত্র বাংলাদেশি সিনেমা, যা অফিশিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে!
৬ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই, প্রতি মুহূর্তে দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় ছিলো ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। বিশ্বখ্যাত হলিউড রিপোর্টার থেকে শুরু করে ডেডলাইন, ভ্যারাইটিসহ নামিদামি সংবাদ মাধ্যম ও সমালোচকরা এই ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এই সিনেমার নির্মাতা সাদ ছাড়াও সিনেসমালোচকদের প্রশংসার কেন্দ্রে ছিলেন মূল চরিত্রে অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন।
মরিয়মকে নিয়ে ফিল্ম ক্রিটিকদের থেকে পাওয়া দারুণ সব মন্তব্যে এখনও বিভোর বাঁধন! তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও যেন সে কথাই বলছে। অথচ এরমধ্যে তিনি মুখোমুখি মুসকান জুবেরীর!
মুসকান জুবেরী কলকাতার খ্যাতিমান নির্মাতা সৃজিত মুখার্জীর পরিচালনায় মুক্তি প্রতীক্ষিত আসন্ন ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র মূল চরিত্র। বাংলাদেশি লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা একই নামের থ্রিলারধর্মী উপন্যাস অবলম্বনে সিরিজটি নির্মাণ করেছেন সৃজিত। যেখানে এক রহস্যময়ী নারীর প্রহেলিকাময় জগতের গল্প আছে। সেই নারীর চরিত্রেই আছেন বাঁধন। তিনি ছাড়াও বলিউডের রাহুল বোস ও কলকাতার অনির্বাণসহ বেশ কয়েকজন নামি অভিনেতাকে দেখা যাবে সিরিজটিতে।
আসছে ১৩ আগস্ট ভারতীয় স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম হইচইতে সিরিজটি দেখতে পারবেন দর্শক। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এর ট্রেলার। যেখানে বাঁধনের চরিত্রটি রহস্যাবৃতই রেখেছেন নির্মাতা। তবে এটুকু স্পষ্ট, এই চরিত্রটি করতেও বাঁধন নিজেকে দারুণভাবেই প্রস্তুত করেছেন।
যার প্রমাণ মিলবে গত মে মাসে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জীর একটি মন্তব্যে। বাঁধনের সাথে একটি ছবি পোস্ট করে সেসময় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘কাজের জন্য আপনার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই বাঁধন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শুটিং চালিয়ে যাওয়া, কাজ নিয়ে অসংখ্যবার প্রশ্ন তোলা, প্রচুর সময় চেয়ে নেয়ার মাঝেও আপনি মুসকান জুবেরী চরিত্রটিকে জিতিয়ে দিয়েছেন এবং আমাকে গর্বিত করেছেন।’
গেল বছর ভারতে শুটিংকালে মুসকানের চরিত্রটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাঁধন জানিয়েছিলেন, ‘গত তিন বছরে ধরে আমি কাজ নিয়ে যখন সচেতন হলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমাদের দেশ বা উপমহাদেশে নয়, পুরো পৃথিবীতেই নারী প্রধান গল্প খুবই কম। কিংবা টুকটাক কোথাও হলেও নারী প্রধান গল্পগুলোতে নারীদের চরিত্র খুব একটা স্ট্রং না। কী রকম দুর্বল একটা ব্যাপার থেকেই যায়। কিন্তু ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র মুসকান জুবেরী যে চরিত্রটি, এটি খুবই শক্তিশালী একটি চরিত্র। এরকম চরিত্র সিনেমা গল্পে খুবই বিরল। এরকম দারুণ একটি চরিত্র যে আমি পেয়েছি, এজন্য আমি সত্যিই খুব হ্যাপি!”
বাঁধন অভিনীত ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র কথা দর্শক আগে জানলেও এর বছর দুয়েক আগে শুটিং সম্পন্ন হয় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটির। পর পর দুটি কাজেই মূখ্য চরিত্রে নারী। যেখানে রেহানা মরিয়ম ও মুসকান চরিত্রে নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় বাঁধন।
সামনে হয়তো আরো নতুন, বিচিত্র চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে উপস্থিত হবেন বাঁধন। চমকে দিবেন মরিয়ম, কিংবা মুসকানের মতো অন্য কোনো নাম নিয়ে। সে অপেক্ষায় আছে দর্শক ও।