চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শিক্ষার খরচ যোগাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বহু পরিবার ঋণগ্রস্ত: ইউনেস্কো

করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে, ফলে অনেক পরিবার সন্তানের শিক্ষার খরচ যোগাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রাইভেট টিউশন, শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষা সংক্রান্ত খরচগুলো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একই। ফলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে এটি অনেক পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় পরিচালিত ইউনেস্কোর “গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র।

মঙ্গলবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল জাতীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চার শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে জাতিসংঘ সুপারিশ করলেও গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ খরচ করছে আড়াই শতাংশেরও কম। ফলে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করতে হয় বেসরকারি উৎসকে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্মানিত অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।

ব্র্যাকের এডুকেশন, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট, অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সাফি রহমান খানের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

পরে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউনেস্কো জেম রিপোর্টের পরিচালক ম্যানোস আন্তোনিনিস। গবেষণার বাংলাদেশ পর্ব নিয়ে কথা বলেন ব্র্যাকের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ। ইন্টারেক্টিভ সেশন পরিচালনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ডা. দীপু মনি বলেন, “একটা শিশুকে কেন ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হবে? তারপর যখন সে উত্তীর্ণ হতে না পারে, ভেবে দেখুন, এই ছয়বছর, দশবছর, বারোবছরের একটা শিশু, তার মনের উপরে আত্মবিশ্বাসের উপরে কী ধরনের প্রভাব আসে। এবং এদিকে বাবামায়েরা একেবারেই নজর দেন না। এসব নানা দিকে চিন্তা করেই আমরা ২০২১ থেকে লটারির মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা করে আসছি। আমাদের প্রাইভেট স্কুলে আসন সংখ্যা ৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৮০ যেখানে আবেদন করেছে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার। আর সরকারি স্কুলে, যার মান ততটা উন্নত নয় বলে দাবি করা হয়, সেখানে আসন সংখ্যা ১ লক্ষ ৭ হাজার ৯০৭, সেখানে আবেদন করেছে ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার। এখানেই বোঝা যায় মানুষের আগ্রহ কোন দিকে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকতা পেশাটাকে আমাদের আরও অনেক বেশি আকর্ষণীয় করার দরকার আছে। এই পেশাটাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে না পারলে, তারাই এই পেশায়  আসবেন যারা অন্য কোথাও যেতে পারছেন না। কিন্তু এই পেশাটাকে ভালোবেসে, জীবনের লক্ষ্য করে যদি কেউ আসেন, তার কাছ থেকে আমরা আরও অনেক ভালো ফল পাবো।”

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “কেজরিওয়াল দিল্লীর শিক্ষার চেহারা বদলে দিয়েছেন। এখন সেখানে ৯০ ভাগ যায় পাবলিক স্কুলে। কীভাবে এবং কেন – সেটা আমাদের জানা উচিত। এখন সেখানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পায় না। পুরো সরকারি শিক্ষাকে শিক্ষার্থীবান্ধব করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবকাঠামো দেয়া হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে।”

ব্র্যাকের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার বিনিয়োগ বাড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও নিচের দিকে আছে। তাদের অবস্থা বাংলাদেশ থেকে একটু ভালো হলেও ততটা ভালো নয়।” সরকারি অর্থায়নের মানে কিন্তু সব প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপে যেতে এমপিও মডেলটাকে সংস্কার করা যেতে পারে ।

ম্যানোস আন্তোনিনিস বলেন, “শিক্ষাখাতে অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয় ও সমতার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারের উচিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য এমন একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা এবং রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়ানো।”

শিক্ষার ’কোর সার্ভিস’ নিয়ে কথা বলা হলেও আনুসাঙ্গিক সেবা নিয়ে আলাপ হয় না উল্লেখ করে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ সব নিয়ে আলোচনা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা শেষ করেন।

ব্র্যাকের সহযোগিতায় পরিচালিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা খাতে প্রবেশগম্যতা অন্য যে কোন অঞ্চল অপেক্ষা বহু গুণে বৃদ্ধি পেলেও বৈশ্বিক গড় মান অপেক্ষা শিখন মাত্রা এখানে এখনো এক-তৃতীয়াংশেরও কম এবং এগিয়ে যাওয়ার গতিও বাকি পৃথিবী থেকে অনেক কম।

প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে উঠে এসেছে যে, সকল সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা কার্যক্রমকে একটি একক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনত হবে যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা এবং সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে। তবেই শিক্ষার গুণগত মান ও সমতার উন্নতি করা সম্ভব।