ষাটের দশকে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ নামে কবিতা লিখে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাংরি জেনারেশনের অন্যতম কবি মলয় রায়চৌধুরী। আজন্ম প্রতিষ্ঠান বিরোধী এই কবির জীবনাবসান হলো বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর)।
রায়চৌধুরীর পরিবারের বরাতে মলয় রায়চৌধুরীর ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়, “গভীর শোক এবং অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমার বাবা, মলয় রায়চৌধুরী আজ সকালে মারা গেছেন।”
বহস্পতিবার দুপুরে এমন পোস্টের পর মুহূর্তেই মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে যায়। তার মৃত্যুতে শুধু ভারতীয়রাই নয়, শোক জানাচ্ছেন বাংলাদেশের শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরাও।
কবি পরিচিতি ছাড়াও মলয় রায়চৌধুরী ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক , সাংবাদিক, গণবুদ্ধিজীবি এবং সর্বোপরি ষাটের দশকের হাংরি আন্দোলন বা হাংরিয়ালিজম তথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক। আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে তাকে কেউ কেউ মনে করেন জলজলে তারা!
গতানুগতিক চিন্তাধারা সচেতনভাবে বর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে উত্তর আধুনিকতাবাদ চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতার জন্যে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবরণের কারণে আমেরিকা ও ইউরোপে মলয় রায়চৌধুরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন ভাষায় এই কবিতাটি অনুদিত হয়।
১৯৬১ সালে বড় ভাই সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়ার (দেবী রায়) সঙ্গে হাংরি আন্দোলন শুরু করেই সাড়া ফেলে দেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় প্রায় চল্লিশজন কবি, লেখক ও চিত্রশিল্পী এই আন্দোলনে যোগ দেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, বাসুদেব দাশগুপ্ত, ফালগুনী রায়, অনিল করঞ্জাই, রবীন্দ্র গুহ প্রমুখ।
এই আন্দোলনের মুখপত্র হিসাবে এক পাতার বুলেটিন প্রকাশ করা হতো। ১৯৬৫ পর্যন্ত এই আন্দোলন পুরোদমে চলেছিল; বিখ্যাত হাংরি মামলার পর তা ভেঙে যায়। আন্দোলনটি নিয়ে মলয় রায়চৌধুরী হাংরি কিংবদন্তি নামে একটি গ্রন্হে আন্দোলনের ইতিহাস তত্ব ও তথ্য নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। পরবর্তীকালে প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নথিপত্র, আদালতে সাক্ষ্য, আদালতের রায় এবং হাংরি আন্দোলনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত হয় হাংরি আন্দোলন গ্রন্হ। মলয় রায়চৌধুরী তিরিশ বছর যাবত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেগুলি একত্রিত করে প্রকাশ করেছেন প্রতিভাস প্রকাশনী।