কিংবদন্তী গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ গোটা সংগীত ও সিনেমা অঙ্গনের মানুষ। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের এই স্রষ্টাকে নিয়ে আসা হয় চ্যানেল আই ভবনে। সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয় ব্যক্তিত্বকে শেষ বিদায় জানাতে যেখানে জড়ো হন শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত সব মুখ।
দুপুর ২টা। তাকে বহন করা গাড়িটি রাখা চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে। সংগীত ও সিনেমার মানুষ সহ শেষ বার প্রিয় মুখটি দেখতে ভিড় করেন অনেকে। এসময় চ্যানেল আইয়ের মূল ফটক দিয়ে বের হতে দেখা যায় আরেক কিংবদন্তীতূল্য সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমকে। তিনি দূর থেকে দাঁড়িয়ে লাশবাহী গাড়িটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। এসময় ‘মা গো মা’ খ্যাত এই সংগীতশিল্পীকে একটু জোর করেই লাশবাহী গাড়িটির দিকে নিয়ে আসেন একজন।
গাড়ির দরোজা সরিয়ে খুরশীদ আলমকে সুযোগ করে দেয়া হয় শেষবারের মতো গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে দেখতে। স্বচ্ছ গ্লাস ভেদ করে গাজী মাজহারুলের নিথর মুখটি স্পষ্ট হয়। এক পলক তাকিয়ে লাশবাহী গাড়ির পাশে নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে থাকেন খুরশীদ আলম। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকার পর গুণী এই শিল্পীকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। চশমা খুলে বার বার চোখের কোনে জল লুকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
সত্তরের দশক থেকেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সাথে পরিচয় ছিলো সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমের। তার লেখা বেশকিছু গান গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। তাদের মধ্যে ছিলো মধুর সম্পর্ক।
এরআগে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সাথে সম্পর্কের কথা জানিয়ে খুরশীদ আলম জানান, ১৯৭০ সালে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। অবশ্যই গানের সূত্র ধরেই। সে বছর ‘সাধারণ মেয়ে’ সিনেমায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘ডিম মারো ডিম মারো’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। পর্দায় গানটির ঠোঁট মিলিয়েছিলেন নায়ক জাফর ইকবাল। তার লেখা দ্বিতীয় গান ‘মানুষের মন’ সিনেমায়। এরপর ‘শাপমুক্তি’ সিনেমায় গাজীর কথায় গেয়েছিলেন ‘ধীরে ধীরে চল ঘোড়া’, পর্দায় যে গানটি ছিলো রাজ্জাকের ঠোঁটে। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো গানটি। এছাড়াও সমাধি সিনেমায় গাজী মাজহারুলের লেখা ‘মা গো মা ওগো মা’ গানটি গেয়ে শ্রোতা দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন খুরশীদ আলম। তিনি মনে করেন, এই গানের জন্যই সিনেমাটিও সেইসময় সুপারহিট ব্যবসা করেছিলো।
শুধু এগুলোই নয়, গাজী মাজহারুলের লেখা আরও কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন খুরশীদ আলম। প্রিয় মানুষটির বিদায়ে তাই ভারাক্রান্ত এই শিল্পী। হৃদয় খুঁড়ে আর বেদনা জাগাতে চাননি হয়তো। তাইতো প্রিয় গীতিকারের বিদায় মুহূর্তে সারাক্ষণ নিশ্চুপেই দাঁড়িয়ে রইলেন!
সোয়া দুইটার দিকে চ্যানেল আই ভবনে অনুষ্ঠিত হয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। সংগীত ও চলচ্চিত্রে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অবদান নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। এসময় তিনি চ্যানেল আইয়ের সাথে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সুসম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন। এছাড়াও কথা বলেন গাজী মাজহারুলের ভাই এবং ছেলে।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগীতব্যক্তিত্ব ফোয়াদ নাসের বাবু, চিত্রনির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক খোরশেদ, গীতিকার আসিফ ইকবাল, গীতিকার জুলফিকার রাসেল, সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরী, শফিক তুহীন ও গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবন সহ সংগীত ও চলচ্চিত্রের আরও গুণী ব্যক্তিত্বরা।