চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যমুনা নদী বেদখল, দু’পাড়ে ময়লার স্তুপ

প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যমুনা নদীর দু’পাড়ের জমি। এতে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। সরকার নদী রক্ষায় ও নদী খনন প্রকল্প হাতে নিলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীটি খনন না করায় পূর্ব দিকে পলি মাটি জমে চর জেগেছে। সুযোগ বুঝে নদীর জায়গা দখল করে বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছেন এলাকার অনেক প্রভাবশালী। এতে নালায় পরিণত হয়ে গেছে নদী।

যমুনা নদীর জায়গা এভাবে দখল হয়ে গেলে নদী আর থাকবে না বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও ফুলবাড়ী যমুনা নদীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি খনন না করায় নালায় পরিণত হয়। ফুলবাড়ী যমুনা নদীটি এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে। নদীটি খনন করা হলে সারাবছর নদীতে পানি ধরে থাকলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু এই নদীটি রক্ষার্থে দেখা যাচ্ছে উদ্যোগের অভাব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর জনৈক একজন প্রভাব খাটিয়ে বেশ কিছু জায়গা দখল করে নিয়েছে, সেই জায়গা দিয়ে রাস্তা ছিল নদীতে নামার। জনসাধারণ নদীতে নেমে গোসল করতো। হিন্দু-সম্প্রদায়ের পরিবারেরা প্রতি বছর সেখানে নেমে ঘাট পূজা করতো, সেই নামার জায়গাটুকু নেই।

পরিবেশবাদীরা নদী রক্ষার্থে আন্দোলন করলেও তেমন সাড়া মেলে না। দেশের হাতেগোনা কয়েকটি নদীর পাড় উদ্ধারের অভিযান হলেও ফুলবাড়ীর যমুনা নদীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর পাড় দখল কবে উদ্ধার হবে, তা কেউ জানে না।

নদীতে ফুলবাড়ী পৌরসভার আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। পৌরসভায় আর্বজনা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় আবর্জনা ফেলার যমুনা নদীই যেন একমাত্র ভরসা। ফুলবাড়ী পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, অথচ জনসাধারণ তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। রাস্তা-ঘাট, লাইটিং, পানি নিস্কাশনের নেই কোন ব্যবস্থা। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অভাবতো রয়ে গেছে। এরপর ফুলবাড়ী পৌর শহরের উপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় ধুলা-বালির শহরে পরিণত হয়েছে।

১৯৮৩ সালে ফুলবাড়ী পৌরসভা স্থাপিত হয়ে ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। যার যার মতো পৌরসভাটি পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমান বাসা-বাড়ি, হোটেল রেঁস্তোরার আর্বজনা ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়ায় সেখানে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালের এই আর্বজনা নদীতে জমে গিয়ে জমাট বেধে থাকছে। যেহেতু নদীতে পানি চলাচল প্রায় বন্ধ। নদীর চরগুলো এখন চাষাবাদ করছে কৃষক। ফুলবাড়ী পৌর শহর এখন পরিবেশের বিপর্যয়ে নেমেছে।

ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদুল আলম লিটনের সাথে কথা বললে তিনি যমুনা নদীতে আবর্জনা ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পৌরসভার কিছু পরিত্যক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলি। নদীতে নয়। হয়তো ময়লা-আবর্জনা গড়িয়ে নদীতে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা শীঘ্রই তা সমাধানের ব্যাবস্থা নিব।’

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী নুরুজ্জামান উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, নদীর পরিবেশ বিপর্যয়ে নেমে এসেছে। শহর পরিষ্কারকল্পে পৌর মেয়রের সৎ ইচ্ছা থাকলেও শহরের আর্বজনা কোথায় ফেলানো হবে তার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। গভীর রাতে ব্রিজের দু’ধারে, র্ঊব্বশী হলের পিছনে ব্রিজের নিচে আর্বজনার স্থূপ জমা হচ্ছে। ফুলবাড়ী শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখন আর্বজনার শহর হিসেবে গড়ে উঠছে। নদীতে প্লাসটিক জমে ভরে গেছে নদীর মূল ভূখন্ড, এতে কারো মাথা ব্যাথা নেই।

এদিকে স্থানীয় প্রবীন সাংবাদিক আফজাল হোসেন জানান, ফুলবাড়ী পৌরসভায় বিভিন্ন এলাকায় ধুলা বালি যাতে না উড়ে সেজন্য পানি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, এখন তা নেই। ফুলবাড়ী পৌরসভার অভিভাক থাকলেও এখন এসব দেখার দায়িত্ব কার! তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’
এই ব্যাপারে পৌরবাসী পরিবেশ রক্ষার্থে প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।