হিজামা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের আড়ালে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল সংগঠনটির অন্যতম শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান। এছাড়াও বাড়ি থেকে পালিয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করা জাকারিয়া হোসাইন ও মো. আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত পাহাড়ে গিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সম্প্রতি র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেনসহ জাকারিয়া, আহাদুল ইসলাম গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছে। সোমবার রাতে র্যাব-১ ও ৭ এর আভিযানিক দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে একটি সিএনজি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট।
মঙ্গলবার ৬ জুন দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন: নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন অন্য দুই সদস্যকে নিয়ে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করে সংগঠনের আত্মগোপন করে আমীরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। মোশারফ রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকাকালীন হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল এবং ঢাকাস্থ সকল শূরা কমিটির মিটিং তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত।
আল মঈন বলেন: আগে গ্রেপ্তার সংগঠনের শুরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যান্যরা দেশ ও দেশের বাহির থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে মোশারফের কাছে জমা রাখত। সে সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সিগঞ্জে গবাদি পশুর খামার স্থাপন করে এবং তথাকথিত হিজরত করা অধিকাংশ সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময়ে থেকে শারীরিক কসরত ও তাত্তিক জ্ঞান প্রদান করত। সে সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র ও রসদ কেনাসহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করত এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাতো। এছাড়াও স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ সদস্যদের পাহাড়ে পাঠানোর সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করাসহ বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরেও গিয়েছে মোশারফ।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন: মোশারফ ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। তার কাছে আনসার আল ইসলামের প্রায় ১৫ লাখ টাকা জমা ছিল। এছাড়াও নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ২০ লাখ টাকা তার কাছে জমা ছিল। এর মধ্যে সংগঠনের কাজে সাত লাখ টাকা খরচ করেছে।
কমান্ডার মঈন বলেন: গ্রেপ্তার সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন। ২০২২ সালে পরিবারকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে মোশারফের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি ও বাকলাইপাড়া হয়ে কেটিসিতে যান। পাহাড়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকেন। জাকারিয়া ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে ফরিদপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
আল মঈন বলেন: গ্রেপ্তার আহাদুল কুমিল্লার একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ সেমিস্টারে পড়ছেন। তিনি ২০১৮ সালে তার এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে সংগঠনের আমীর মাহমুদ এর সাথে তার পরিচয় হোন। আমীর মাহমুদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। প্রথমে প্রায় দুই মাস আমীর মাহমুদের বাসায় অবস্থান করেন এবং আমীরের ব্যক্তিগত সহযোগী ছিলেন। পরে একই পদ্ধতিতে আমীর মাহমুদের মাধ্যমে পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন।