রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃতি পায় দেশের অন্যতম প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠটি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাফল্যের ১৮ বছর পূর্ণ করে ১৯ বছরে পদার্পণ করছে। পাশাপাশি ১৬৬ বছরে পা দিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গৌরব ও সাফল্যের ১৭ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।
এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে আরমানিটোলায় ব্রাহ্ম সমাজের নিজস্ব প্রাঙ্গণে চালু করা হয় একটি অবৈতনিক স্কুল। আর্থিক সংকটের কারণে ১৮৭২ সালে মালিকানা পরিবর্তন করে ব্রাহ্ম স্কুলের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল বালিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর হাতে। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৪ সালে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ এবং ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে। এইসময় এটিই ছিলো ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পুরনো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় সহশিক্ষা চালু করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি একটি পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। এই অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা গুচিয়ে ক্যাম্পাসের বিপরীত পাশে বাংলাবাজার সংলগ্ন ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট হলে ১২০০ ছাত্রীর আসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু রয়েছে। অনেক আগেই ইউজিসির প্রতিবেদনে এ-গ্রেড ভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
মর্যাদা ও ঐতিহ্যের কালো গাউন পরে সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করার প্রত্যাশা থাকে সব শিক্ষার্থীরই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয় এবছরের শুরুতেই। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর ১১ জানুয়ারি ২০২০ সালে প্রথম সমাবর্তন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুরান ঢাকার ধূপখোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজিত হয় এই সমাবর্তন। সমাবর্তনে অংশ নেন প্রায় ১৮ হাজার গ্র্যাজুয়েট ও অন্য ডিগ্রিধারী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। যার মাধ্যমে কেরানীগঞ্জে প্রায় ২০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে আধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।