
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে এই ঘটনা ঘটে। সেসময়, ছাত্রলীগ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগে জোরপূর্বক বাধাও দেন।
উপাচার্য দপ্তরসূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় জাবির ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে প্রার্থীদের বের করে দিয়ে গেট আটকে দেন।
সেসময়, ছাত্রলীগ নেতারা প্রার্থীদের বলতে থাকেন, ‘আজকে নিয়োগ বোর্ড হবে না, আপনারা চলে যান।’ পরে দুপুর ১২টায় উপাচার্যের নির্দেশে তার একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস অনিবার্য কারণে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রার্থীদের চলে যেতে বলেন। বোর্ড কবে বসানো হবে, তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে প্রার্থীদের জানিয়ে দেন তিনি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনসহ অন্য সিনিয়র নেতাকর্মীদের সাথে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ঘরোয়া বৈঠক করেন উপাচার্য মো. নূরুল আলম। সেসময় জাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ- রাশেদা আখতার ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত ছিলেন।
শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগে ৩৯, ৪২ ও ৪৪ ব্যাচের প্রথম ও দ্বিতীয়স্থান অধিকারী তিন শিক্ষার্থীকে নতুন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ৪৪ ব্যাচের স্নাতকে পঞ্চম স্থান অধিকারী সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ ঘটনার জেরে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের নির্দেশে উপাচার্য কার্যালয় অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল বলেন, প্রশাসন কাকে নিয়োগ দেবে সেই বিষয়ে আমাদের কোনো মত নেই। তবে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধী কেউ নিয়োগ পেলে আমাদের আপত্তি আছে। এছাড়া, নিয়োগে যেন স্বজনপ্রীতি না হয় সেটি প্রশাসনকে আমরা জানিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কাউকে নিয়োগ না দেওয়ার দাবিটি আমরাও সমর্থন করি। ছাত্রলীগের অবরোধ বা অন্য কোন বাধা ভবিষ্যতে কোন নিয়োগ বোর্ডকে প্রভাবিত করবে না। নিয়োগ বোর্ড নিয়ম মোতাবেক চলবে।
ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে ওই ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইনস্টিটটিউটে শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি। একটি শূন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন প্রার্থী ছিল। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
বিজ্ঞাপন