টি-টুয়েন্টি মানেই মারকাটারি রানের খেলা- এমন ধারণাই প্রচলিত! সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি মাঠে গড়াবে, চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে রানবন্যা বইয়ে দেবেন ব্যাটাররা, দর্শকরা হবে মাতোয়ারা, বোলাররা দেখবেন চেয়ে চেয়ে! অসহায় হয়ে ছুঁড়তে যাবেন পরের বলটা!
বাস্তবতা অবশ্য তেমন একপেশে নয়। সময় যতো গড়িয়েছে, টি-টুয়েন্টিতে বোলাররাও দেখিয়ে চলেছেন সমান কার্যকারিতা। ব্যাটাররা যেমন ঝড় তুলতে পারঙ্গম হয়েছেন দিনকে দিন, বোলাররাও তেমনি শিখে গেছেন বুদ্ধি আর দক্ষতার ঝলক দেখিয়ে তাদের চোখে চোখ রেখে রান আটকানোর কৌশল ও উইকেট তোলার পথ।
বোলাররা নিত্য-নতুন পরিকল্পনা প্রয়োগ করছেন। পেস বোলারদের প্রসঙ্গ যদি আসে, টেস্ট-ওয়ানডের পাশাপাশি ২০ ওভারের খেলাতেও তারা এখন সমান কার্যকর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন অনেকেই। তবে আলাদা করে নজর কেড়েছেন পেসাররা। দাপট দেখানোদের মধ্যে কয়েকজন মুসলিম পেসার রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে।
রোববার পর্দা নামার অপেক্ষায় এবারের আইপিএল। প্রথমবার ১০ দল অংশ নিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স হওয়ার লড়াইয়ে টিকে গেছে নবাগত গুজরাট টাইটান্স এবং প্রথম আসরের শিরোপাজয়ী রাজস্থান রয়্যালস। শিরোপা ফয়সালার আগে দেখে নেয়া যাক কেমন ছিল চলতি আসরে মুসলিম পেসারদের পারফরম্যান্স।
উমরান মালিক (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)
গতিঝড় তুলে আলোচনায় আসা ২২ বর্ষী সেনসেশন জম্মু-কাশ্মীরের ডানহাতি পেসার উমরান মালিক আসর মাতিয়ে জাতীয় দলেই জায়গা করে নিয়েছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৫৬.৯ কিমি. গতিতে তার ছোঁড়া বল নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা। আইপিএল ইতিহাসে সেটিই যে সর্বোচ্চ গতির বল। তার পারফরম্যান্সও ছিল নজরকাড়া। ১৪ ম্যাচে ২০.১৮ গড়ে ৯.০৩ ইকোনমিতে নিয়েছেন ২২ উইকেট। গুজরাটের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২৫ রানে নেন ৫ উইকেট।
শুধুমাত্র মুসলিম বোলারদের মধ্যেই নন, এবারের আইপিএলে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক উইকেট শিকারি। খরুচে হলেও উইকেট দখলে দক্ষতা দেখিয়েছেন। যে পারফরম্যান্সের পুরস্কার সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজের দলে ডাক পাওয়া।
মোহাম্মদ শামি (গুজরাট টাইটান্স)
ভারত দলের নির্ভরযোগ্য পেসার হলেও পেস আক্রমণে বিশ্বসেরার কাতারে পৌঁছা জাতীয় দলটিতে নিয়মিত জায়গা পেতে তাকে করতে হয় লড়াই। আইপিএলে টানা সুযোগ পেয়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাকই করে গেছেন। গুজরাটের হয়ে ফাইনালে খেলবেন। আসরে ১৫ ম্যাচে ২৩.৯৪ গড়ে ৭.৯৮ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকার অষ্টম স্থানে আছেন ডানহাতি পেসার।
আভেশ খান (লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস)
২৫ বর্ষী ডানহাতি পেসারের গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় ভারত দলে। একই মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন আরেকটি ম্যাচ। এরপর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামা হয়নি। দুই ম্যাচে ২ উইকেট। আইপিএলে জ্বলেছেন স্বরূপে। ১৩ ম্যাচে ২৫.১১ গড়ে ৮.৭২ ইকোনমিতে ১৮ উইকেট তুলেছেন।
মুহসিন খান (লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস)
উত্তর প্রদেশের হয়ে খেলেছেন একটি মাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। লিস্ট-এ খেলেছেন ১৭টি। আইপিএলের আগে তাকে নিয়ে এতটা আলোচনা হয়নি। বল হাতে ভালো করায় আছেন নির্বাচকদের চোখে চোখে। আসরে কেবল ৯ ম্যাচ খেলেই ১৪ উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেটটা দারুণ, ৫.৯৬।
খলিল আহমেদ (দিল্লি ক্যাপিটালস)
২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের জার্সিতে খেলেছিলেন। একই বছর প্রথমবার আইপিএলে পান দল। ১০ লাখ রুপিতে তাকে কিনেছিল দিল্লি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ১১ ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টুয়েন্টি। চলতি আসরে ১০ ম্যাচে ১৯.৬৮ গড়ে ৮.০৪ ইকোনমিতে ১৬ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন।
মোহাম্মদ সিরাজ (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)
ভারতের টেস্ট দলে হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য। রঞ্জী ট্রফিতে এক মৌসুমে ৯ ম্যাচে ৪১ উইকেট নিয়ে নজরে এসেছিলেন। এবারের আইপিএল যদিও সুখকর যায়নি তার। ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট।
মোস্তাফিজুর রহমান (দিল্লি ক্যাপিটালস)
বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে পেয়েছিলেন দল। ২ কোটি রুপিতে দিল্লি নিয়েছিল তাকে। শুরুটা হয়েছিল সব ম্যাচেই একাদশে জায়গা পাওয়ার মতো। শেষপর্যন্ত আট ম্যাচের বেশি সুযোগ পাননি। ৩০.৫০ গড়ে তুলেছেন ৮ উইকেট। ইকোনমি ৭.৬২।
এছাড়া ২১ বর্ষী আফগান বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ৩ ম্যাচ খেলে পাননি উইকেটের দেখা। কোনো ম্যাচ না পেলেও একাধিক দলে স্কোয়াডে মুসলিম পেসাররা ছিলেন। কলকাতার যেমন ২৫ বর্ষী ডানহাতি আমান হাকিম খান ও রাশিখ সালাম। চেন্নাই সুপার কিংসে তেমনি ছিলেন ম্যাচ না খেলা ২৮ বর্ষী কেএম আসিফ। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ছিলেন মাঠে নামার সুযোগ না পাওয়া ২৪ বর্ষী বাঁহাতি পেসার আরশাদ খান।