কাতারের আইনে সমকামীতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যে আইন বাতিল চায় জার্মান ফুটবল ফেডারেশন। ফিফা বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ শুরুর দুমাস আগে জার্মানিতে কাতারের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করা হয়েছে।
বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় দেশটির সমকামী দর্শন। শুরুর দিকে তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথাও উঠেছিল, মাঠ বা হোটেলে থাকা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা। এমন সময়ে আইন তুলে নেয়ার ব্যাপারটি আবারও সামনে আসায় চিন্তা বাড়াচ্ছে কাতারের।
ফ্রাঙ্কফুর্টে দেশটির রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন সৌদ আল থানিকে সমকামী আইন তুলে নেয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ। ফুটবল দর্শকদের প্রতিনিধি হয়ে আসা ডারিও মিন্ডেন বিষয়টির গভীরতা বুঝিয়েছেন এবং মেনে নিতে আবেদন জানিয়েছেন।
মিন্ডেন বলেছেন, ‘মানুষ বলেই মানুষকে ভালোবাসি। আমিও অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনতায় জড়িয়েছি— দয়া করে হতাশ হবেন না। এটা স্বাভাবিক। তাই এটাতে মানিয়ে নিন অথবা ফুটবল থেকে দূরে থাকুন। ফুটবলের খুব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হচ্ছে খেলাটি সবার। আপনি সমকামী কিনা তাতে কিছু যায় আসে না। ফুটবল সবার।’
আইনটি তুলে নিতে সম্পদশালী বা ক্ষমতাধর বিষয়টিকেও অগ্রাহ্য করছেন মিন্ডেন। তার মতে, ‘ফুটবল সবার’ এই সত্য মানতে হলে কাতারকে মানবাধিকার সাংঘর্ষিক আইনটি বাতিল করতে হবে। মিন্ডেন শক্তভাবে দূত থানিকে বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের আইনটি মুছে ফেলুন। যৌন এবং লিঙ্গ সংক্রান্ত সব দণ্ড বাতিল করুন। ফুটবলের যে নিয়ম সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যতই ধনী হোন না কেনো আমরা তা ভাঙতে দেব না।’
বিশ্বকাপে উপস্থিতির নিষেধাজ্ঞা না দিলেও নিরাপত্তার স্বার্থে মাঠে সমকামীদের প্রতীকী পতাকা রংধনুকে উড়তে দেবে না কাতার। আসরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল আব্দুল আজিজ আবদুল্লাহ আল আনসারি বলেছিলেন, ‘যদি সমকামী স্বাধীনতার প্রতীক রংধনু পতাকা তুলে ধরে, সেটি নিয়ে নেয়া হবে। সত্যিই এটি তাকে অপমান করতে নয়, বরং তাকে রক্ষা করতে এ ব্যবস্থা। কারণ আমি না হলেও, তার আশেপাশে অন্য কেউ তাদের আক্রমণ করতে পারে। সব মানুষের আচরণের নিশ্চয়তা দিতে পারি না। তাদের বলব, দয়া করে মাঠে পতাকা তোলার দরকার নেই।’
কাতারে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন সমকামীরা। সেই শঙ্কা দূর করে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছিলেন, ‘বিশ্ব দেখবে কাতার সবাইকে স্বাগত জানিয়েছে।’
সমকামীদের সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান খোলাসা করে আল আনসারি বলেছেন, ‘সমর্থকদের কাতার থেকে দূরে থাকতে বলছি না বা তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করছি না। একসাথে কক্ষ ভাড়া করুন, একসাথে ঘুমান। এটি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’