বিশ্বকাপের আসরে ত্রয়োদশ দুর্দান্ত ভারত। টানা ১০ ম্যাচ জয়ে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে পৌঁছেছে তারা। ঘরের মাঠের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই ঠিকঠাক কাজ করছে রোহিত শর্মার দল। বল হাতে প্রতিপক্ষদের অল্প রানেই গুটিয়ে দিয়েছেন, আর ব্যাট হাতে ছিল রান বন্যা। রোহিতের নেতৃত্বে আসরে অপরাজিত ভারতের অপেক্ষা তৃতীয় শিরোপা অর্জনের। অন্যদিকে ষষ্ঠ শিরোপার অপেক্ষায় অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। সবচেয়ে বেশি পাঁচবার বিশ্বকাপ নেয়া দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন ৩০ বর্ষী পেসার প্যাট কামিন্স। দুই ম্যাচ হেরে আসর শুরু করা অস্ট্রেলিয়া দুর্দান্ত ফর্মে পৌঁছেছে ফাইনালে। সবশেষ খেলা ১০ ম্যাচের ৮টিতে জয় পেয়েছে অজিরা। সেমিফাইনালে ‘চোকার্স’ ট্যাগ পাওয়া সাউথ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে পা রেখেছে শিরোপার মঞ্চে।
রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গড়াবে ফাইনাল মহারণ। এক লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়। তার আগে ফাইনালে উঠা ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং-বোলিংয়ে শক্তির জায়গাগুলো দেখে নেয়া যাক।
বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে ভারত। ১০ ম্যাচে মোট ২৯২০ রান করেছে রোহিত-কোহলিরা। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহাকের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিরাট কোহলি। ১০ ম্যাচ খেলে তিন সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭১১ রান। সেরা পাঁচে রয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৫৫০ রান করে রয়েছেন পাঁচে। আসরে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে সেঞ্চুরি হয়েছে ৩৯টি, এরমধ্যে ভারতীয় ব্যাটারদের সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭টি। সবমিলিয়ে ১৬ ফিফটির দেখা পেয়েছে রাহুল-আয়াররা।
ভারতের সব ব্যাটারই রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে, সবমিলিয়ে ২৬৪টি চার এবং ৮৯টি ছক্কা মেরেছেন তারা। নিয়মিত পারফর্ম করছেন ওপেনিংয়ে নামা রোহিত ও শুভমন গিল। প্রতিটি ম্যাচেই ওপেনিংয়ে ভালো শুরু করছেন ডানহাতি এ জুটি। তিন নেমে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাচ্ছেন বিরাট কোহলি। চার, পাঁচ বা ছয়ে রান পাচ্ছেন শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদবরা। দলীয় সংগ্রহের তালিকায় আসছে বিশাল রান। যে ফর্মে তারা রয়েছেন ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশাল রান সংগ্রহ করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বল হাতে আরও দুর্দান্ত ভারতের পেসাররা। ৪ ম্যাচ কম খেলেও অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ শামি। ভারতের খেলা মোট ১০টি ম্যাচের মাত্র ছয়টিতে খেলেছেন শামি। সর্বাধিক উইকেট নেয়ার তালিকার সবার উপরে তার নাম। ৬ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। এরমধ্যে ম্যাচে ৫ বা তার বেশি উইকেট নেয়ার সংখ্যা তিনটি। চার উইকেট নিয়েছেন একটিতে, মেডেন ওভার পেয়েছেন তিনটি। অন্যরা যেখানে ৭০, ৮০ বা ৯০ ওভার বল করার সুযোগ পেয়েছেন, শামি বল করেছেন মাত্র ৪১.৫ ওভার। সেরা বোলিং ফিগার ৫৭ রানে ৭ উইকেট, ইকোনোমি ৫.০১। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শামি দেখা পেয়েছিলেন ক্যারিয়ার সেরা এই অর্জনের।
সেরা পাঁচে থাকা আরেক বোলারের নাম জাসপ্রীত বুমরাহ, ১০ ম্যাচে খেলে এ ডানহাতি নিয়েছেন ১৮ উইকেট। ডানহাতি এ পেসার বল করার সুযোগ পেয়েছেন মোট ৮২.৫ ওভার, দিয়েছেন ৩৩০ রান। আসরে এক ম্যাচ খেলা রবীচন্দ্র অশ্বিনের ৩.৪০ ইকোনোমির পর তার অবস্থান ৩.৯৮। ওপেনিং জুটির গুরুত্বপূর্ণ পেসার বুমরাহ হয়ে উঠতে পারেন ফাইনালের ট্রাম্পকার্ড। কম যাননা মোহাম্মদ সিরাজ, রবীন্দ্র জাদেজা বা কুলদীপ যাদবরাও। ফাইনালে তাদের মোকাবেলা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে অস্ট্রেলিয়ার টপঅর্ডার ব্যাটারদের জন্য।
এবারের আসরে ব্যাটার ও বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্স করায় ভারতীয় অলরাউন্ডারদের খুব বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ আসেনি। গ্রুপপর্বের মাঝপথে বাংলাদেশের বিপক্ষে চোটে পড়ে ছিঁটকে যান পেস অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। আসরের বাকি ম্যাচগুলোতে আর ফিরতে পারেননি এ ডানহাতি অলরাউন্ডার। নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। ১০ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৬ উইকেট, চার ইনিংসে ব্যাট করে করেছেন ১১১ রান। অপরাজিত ছিলেন ২টি ইনিংসে।
অন্যদিকে আইসিসির যে কোনো আসর আসলেই বাঘের হুঙ্কার দিয়ে উঠে অস্ট্রেলিয়া। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিসহ সকল ধরণের ট্রফিজয়ী একমাত্র দল অস্ট্রেলিয়া। সবশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতা দলটি আবারও পৌঁছে গেছে ফাইনালে। ঘরের মাঠে ভারতকে হারিয়ে হেক্সা জয় করতে বদ্ধপরিকর দলটি। আসরে ১০ ম্যাচ খেলে সবমিলিয়ে ২৮৪৬ রান করেছে অজিরা।
ভারতের মত সেরা পাঁচে না থাকলেও সেরা দশে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। ৫২৮ রান করা ওয়ার্নারের অবস্থান ছয়ে। দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে সেরা দশের অন্যতম নাম তার। চার ও ছক্কা মারার দিক থেকে অন্যসব ব্যাটার থেকে এগিয়ে ওয়ার্নার, মেরেছেন ৪৯টি চার ও ২৪টি ছক্কা। অন্যদিকে সেরার তালিকার নয়ে আছেন ডানহাতি টপঅর্ডার মার্শ। জন্মদিনে সেঞ্চুরি পাওয়া এ তারকা আসরে দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন। একটি ফিফটিতে তার মোট রান ৪২৬, সর্বোচ্চ ১৭৭ নটআউট। চার ছক্কায় কমও যান না, মেরেছেন ৪২টি চার ও ২০টি ছক্কা। নিয়মিত রান পাচ্ছেন ওপেনার ট্রাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেনসহ অন্যান্যরাও। ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরো অস্ট্রেলিয়া।
দুই ম্যাচ হারের পর ফাইনালে আনতে কম যাননি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাও। দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। শামির আগে সর্বাধিক উইকেট শিকারীর তালিকায় সবার উপরে ছিল তার নাম। আসরে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে ২২ উইকেট নিয়ে শামির পরেই আছেন তিনি। ৮৬ ওভার বল করে মেডেন নিয়েছেন একটি, দিয়েছেন ৪৭১ রান। সেরা বোলিং ফিগার ৮ রানে ৪ উইকেট এবং ইকোনোমি ৫.৪৭ করে।
জাম্পার পর সবচেয়ে বেশি কার্যকর বোলিং করে এসেছেন পেসার জশ হ্যাজেলউড। ১০ ম্যাচ খেলা এ ডানহাতি ৮৩.১ ওভার বল করে ৮টি মেডেনসহ ১৪ উইকেট নিয়েছেন, দিয়েছেন ৩৮৯ রান। গত দুই আসরের সর্বাধিক উইকেট শিকারী মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সও কম যান না। সেরার তালিকায় এ দুই পেসার আছেন যৌথভাবে ১৭ নম্বরে, এক ম্যাচ কম খেলা স্টার্ক ও কামিন্স নিয়েছেন সমান ১৩টি করে উইকেট। ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করতে না পারলেও দুই পেসারের ইকোনোমি বেশ ভালো এবং সেটা ছয়ের সামান্য একটু বেশি করে। সেমিফাইনালের মত ফাইনালেও দল সেরা পারফর্ম চাইবে তাদের কাছেও।
বেশ ভালোই রান পাচ্ছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আসরে দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন, যার মধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে। ৮ ম্যাচ খেলা ম্যাক্সওয়েল বোলিংয়েও নিয়েছেন ৫ উইকেট, ইকোনোমি সাড়ে চারের একটু বেশি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা জীবনের সেরা ম্যাচের মতই ফর্ম আশা করবে দল তার কাছে। তবে কম্বিনেশনের জন্য দলে জায়গা না পাওয়া মার্কাস স্টয়নিসও মোটামুটি ফর্মে আছেন। ৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ৮৭ রান, উইকেট নিয়েছেন ৪টি। রান ও উইকেট সংখ্যা কম থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নিতে জুড়ি মেলা ভার স্টয়নিসের।
বিজ্ঞাপন