ঘড়ির কাটায় সময় তখন ১২টা বেজে ২০ মিনিট। সাভার থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মেহেরুন নেসা দায়িত্বরত এক স্বেচ্ছাসেবকের সাথে দৌঁড়াতে থাকে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের দিকে। দেরীতে আসায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা একবার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়ে পরে আবার ফেরত নিয়ে পরীক্ষা কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন। বের হয়ে এসে শান্ত চত্ত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেহেরুন নেসা নামের ওই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গুচ্ছ ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে সাভার থেকে বাসে করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছে মেহেরুন নেসা। গুলিস্তান থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক রাস্তায় তীব্র জ্যামে আটকা পড়েন মেহেরুন ও তার বোন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শুরু হলেও যানজটের কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে মেহেরুন প্রবেশ করে ১২টা ২০ মিনিটে।
এক স্বেচ্ছাসেবক তাকে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের ৪র্থ তলার ইতিহাস বিভাগে নিয়ে যান। ২০ মিনিট দেরীতে আসায় পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষক বলে ওএমআর শিট নাই। এখন আর পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এরপর তাকে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে বলে। চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি নিয়ে আসে। পরে দেখা যায় মেহেরুনের আসন তৃতীয় তলায় না, চতুর্থ তলায়। মেহেরুন চতুর্থ তলায় নিয়ে যেতে ১২টা ৪০ বেজে যায়। চতুর্থ তলার ৪০১ নাম্বার রুমে গেলে সেই রুমের দায়িত্বরত শিক্ষক মেহেরুনকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে বের করে দেন।
মেহেরুন নেসা বলেন, যানজটের কারণে আমি ২০ মিনিট দেরি করে পরীক্ষা দিতে আসি, পরে এক স্বেচ্ছাসেবী আপু আমাকে রফিক ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যায়। অনুমতি নিয়ে আমাকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হলেও পরে সেটি আমার নির্ধারিত কক্ষ নয় এমন কারণ দেখিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে আমার নির্দিষ্ট কক্ষে উপস্থিত হলেও আমাকে পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
কান্নারত অবস্থায় মেহেরুন বলেন, আমাকে যখন পরীক্ষা দিতে দিবে না তাহলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটেই আটকাতো। কেন আমাকে ভিতরে আসতে দিয়ে একজন শিক্ষকের কাছে হেনেস্তার শিকার হতে হলো? আমার মতো অনেকই দেরীতে এসেও অন্যান্য রুমে পরীক্ষা দিতে পেরেছে। শুধুমাত্র আমাকেই কেনো পরীক্ষা দিতে দিলো না।
এবিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীর উচিত ছিল আমাদের কাছে রিপোর্ট করা। যেহেতু পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই।
এখানে দায়িত্বরত শিক্ষকদের দায়িত্ব কোনো অবহেলা দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্বের কোনো অবহেলা ছিল না। পরীক্ষাকক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক আমাদের শুরুতেই জানালে কিছু করা যেত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট দেরি করে আসলেও পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছি। তবে এটা মানবিক দিক বিবেচনা করেই। পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকরাই এটি দেখবে। আজকে উপকেন্দ্র নটরডেম কলেজের একজন পরীক্ষার্থী ভুল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে এসেছে, আমি জানার পর তারও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাকে যদি আগে বিষয়টি জানানো হতো তাহলে কোনো কিছু করা যেতো। যেহেতু আমাকে পরে জানানো হয়েছে, সেহেতু এখন আর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই।
শিক্ষকের হেনেস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য বলেন, আমাকে যদি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে মেহেরুন নেসা উপাচার্য বরাবর পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষকের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।