বিশ্ব ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সব ইউনিটের সমন্বয়ে বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এই বছরও দুই ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৬ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে মাঠে থাকবেন জুবায়ের পন্থী ২-৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপে সাদ পন্থী ৯-১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
আইজিপি বলেন, ইজতেমার ময়দানের প্রবেশ পথ নিরাপদ রাখতে পুলিশ কাজ করবে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থলে ভিআইপি ভিভিআইপি যদি আসেন তবে তাদের নিরাপত্তা বিশেষ বিবেচনায় রেখে তাদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
আইজিপি আরও বলেন, এ নিরাপত্তা পরিকল্পনা শুধুমাত্র যে ইজতেমাস্থলে তা কিন্তু নয়। রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এলাকা, গাজীপুর জেলা, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি), ঢাকা জেলাসহ সবাই মিলে একটা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছি। এখানে র্যাব, আর্মড ফোর্স ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ, আনসার সদস্যরা রয়েছে৷
তিনি বলেন: ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক দ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম, ক্রাইম সিন ভ্যান, চুরি, ছিনতাই ও পকেটমার প্রতিরোধে টিম, নৌ টহল এবং হেলিকপ্টার টহল থাকবে । রেলওয়ে স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ ও প্রস্থান পথ এবং কৌশলগত পয়েন্টসমূহে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি, নাইট ভিশনসহ আইপি ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, ব্যাটালিয়ন পুলিশ, আনসার সদস্যরা আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ময়দানে ও সড়কে হকারদের দৌরাত্ম ও পকেট মারদের দৌড়াত্ম বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সঠিক আছে কি না তা ড্রোন দিয়ে দেখা হচ্ছে। মানুষের গতিবিধি নজরদারি করা হয়েছে।
আইজিপি বলেন, ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের স্বাগত জানাতে এখানকার সব মুরব্বিরা তাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের ব্যবস্থাপনার সামঞ্জস্য রেখে আমরা আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানিয়েছি। বিদেশি মেহমানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে যোগ করেন আইজিপি।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক কোনো পোস্ট বা ছবি পোস্ট করে কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য আমাদের সাইবার মনিটরিং ও সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য আমরা বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বৈঠক করেছে।
মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ইজতেমাস্থলে কারো যদি কোনো সমস্যা হয় তবে এলাকাভিত্তিক থানা পুলিশ, ডিএমপি হলে ডিএমপি পুলিশকে, র্যাব কন্ট্রোল রুমে জানাতে পারেন। যদি কিছুই মনে না থাকে তবে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে জানাতে পারেন। আপনার সেবা আপনার কাছে পৌঁছে যাবে।
ইজতেমা কেন্দ্রিক কোনো নাশকতা বা জঙ্গি হামলার হুমকি রয়েছে কী না? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য এখনো আমরা পাইনি। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা গোয়েন্দা তথ্য নেই। যারা ইজতেমায় আসবে তারা নির্বিঘ্নে নিরাপদে আসতে পারেন, আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না, যেকোনো পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।
সব সময় ইজতেমায় জুবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। এবারও মারামারির ঘটনা ঘটেছে, এবার ইজতেমা চলাকালীক এমন কোনো ঘটনা মোকাবিলায় কোনো প্রস্তুতি রয়েছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এবার ইজতেমা শুরু আগেই দুই পক্ষের মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাদের আস্বস্ত করেছেন এমন কোনো ঘটনা সংঘটিত হবে না। শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা সফল করতে একে অপরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন বলেও কথা দিয়েছেন। এরপরও যদি কেউ ঝামেলা তৈরি করে তবে সেটি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।