চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অন্যদিন হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন আনোয়ারা সৈয়দ ও মৌরি

এ বছর ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ কারা পাচ্ছেন, বুধবার (৯ নভেম্বর) নাম ঘোষণা করা হলো তাদের।

এবছর এ পুরস্কার সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রবীণ কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে (অনূর্ধ্ব ৪০) মৌরি মরিয়মের নাম ঘোষণা করা হয়েছে ।

তারা পুরস্কার হিসেবে পাবেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং এক লাখ টাকা। এছাড়া প্রদান করা হবে ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সার্টিফিকেট।

২০১৫ সাল থেকে অন্যদিন হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কারের প্রচলন। প্রথম বছরে দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান এবং ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে পুরস্কার পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। ২০২০ সালে পুরস্কৃত হয়েছেন হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ। ২০২১ সালে পুরস্কার পেয়েছেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদিন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক
ছয় দশক ধরে লিখছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক। তার লেখায় বারবার উঠে আসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু আর মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। এ ছাড়াও নারী জীবনের টানোপোড়েন, নারীর বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত জীবনযাপনের কথা তার সাহিত্যে প্রধান একটি উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকও তিনি তুলে ধরেন তার লেখায়। তার জন্ম ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর, যশোর জেলার মোহনগঞ্জের চুড়িপট্টিতে। মা প্রয়াত আছিয়া খাতুন চৌধুরী। বাবা প্রয়াত গোলাম রফিউদ্দিন চৌধুরী। স্বামী সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৬৫ সালে আনোয়ারা সৈয়দ হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। লন্ডন থেকে মনোবিজ্ঞানে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন, ১৯৮১ সালে। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি কাজ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।

১৯৫৪ সালে আনোয়ারা সৈয়দ হকের লেখালেখির সূচনা। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ছানার নানাবাড়ি’ (১৯৭৬)। প্রথম উপন্যাস ‘তৃষিতা’ (১৯৮২)। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : উপন্যাস সোনার হরিণ, বাড়ি ও বনিতা, ভালোবাসার লাল পিঁপড়ে, কার্নিশে ঝুলন্ত গোলাপ, সেই প্রেম সেই সময়, দুই রমণী, উদয় মিনাকে চায়, ফিরে যাবার পথ অনিশ্চিত, নিঃশব্দতার ভাঙচুর, আমার রেণু, হে সন্তপ্ত সময়। গল্পগ্রন্থ আয়নার বন্দি, গলে যাচ্ছে ঝুলন্ত পদক, অন্ধকারে যে দরজা, পূর্ণিমায় নখের আঁচড়, শূন্যতার সাথে নৃত্য, চান্দের আলো কদ্দূর, নিশিগন্ধা, হনন। কাব্যগ্রন্থ মেয়ে হয়েছি বেশ করেছি, কিছু কি পুড়ে যাচ্ছে কোথাও, কাল খুব কষ্টে ছিলাম, আমার শয্যায় এক বালিশ-সতীন, তুমি এক অলৌকিক বাড়িওয়ালা, লোকে বলে এত রাতে রাস্তায় হেঁটে যায় কে। শিশুতোষ গ্রন্থ ছানার নানাবাড়ি, ছানা ও মুক্তিযুদ্ধ, হানাদার বাহিনী জব্দ, হায়নাদের হয়রানি, আগুনের চমক, ভয়ংকর সেই রাত, রাসেল তার আব্বুর হাত ধরে হেঁটে যায়। প্রবন্ধ গ্রন্থ নারীর কিছু কথা আছে, নারীর কোনো কথা নাই, কিশোর-কিশোরীর মন ও তার সমস্যা, পিকাসোর নারীরা, যোগাযোগের মধুসূদন ও অন্যান্য প্রবন্ধ। স্মৃতিকথা : নরক ও ফুলের কাহিনী, অবরুদ্ধ, বিক্ষুব্ধ সংলাপ।

বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আনোয়ারা সৈয়দ হক বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১০) এবং দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক (২০১৯)। এবার কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ অর্জন করলেন আনোয়ারা সৈয়দ হক।

মৌরি মরিয়ম
সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তরুণ লেখক মৌরি মরিয়ম। তার লেখায় মানবিক সম্পর্ক, প্রেম, মান-অভিমান, ভ্রমণ, যাপিত জীবন সমকালের প্রেক্ষাপটে এইসব বিষয় মূর্ত হয়ে ওঠে। তার জন্ম বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়, ১৯৯১ সালের ২৫ মে। মা মনজু বেগম। বাবা প্রয়াত আজিজুল হক। মৌরি মরিয়মের ছোটবেলা কেটেছে ঢাকার ধানমন্ডির রায়ের বাজারে। বেড়ে উঠেছেন এই এলাকাতেই। পড়েছেন ধানমন্ডি গার্লস স্কুল, বদরুন্নেসা কলেজ এবং স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। সাংবাদিকতায় স্নাতক।

লেখালেখির সূচনা গল্প-উপন্যাস পড়ার সূত্রে। তার প্রিয় লেখকদের মধ্যে রয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, হুমায়ূন আহমেদ, জে. কে. রাওলিং, নিকোলাস স্পার্কস। প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয় স্কুল ম্যাগাজিনে।