এখনকার সময়টা উদ্যোক্তাদের। করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরও এগিয়েছে। এসব উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই নারী। প্রযুক্তিকে তারা কিভাবে ব্যবহার করছে আর এর প্রভাবই বা কী। এমন সব আলোচনা থেকে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে: প্রযুক্তি কতটা বদলেছে নারী উদ্যোক্তাদের জীবন?
উদ্যোক্তা শব্দটি সবার কাছে পরিচিত হলেও এর অর্থ অনেকের কাছেই পরিষ্কার না। অধিকাংশের ধারণা ব্যবসায়ী বলতেই উদ্যোক্তা। এ ধারণাটি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে বলা যায়: ‘সব উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী কিন্তু সব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নয়’।
ব্যবসা করতে বড় অংকের মূলধন লাগলেও উদ্যোক্তা হতে মেধা, শ্রম, বুদ্ধি আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক নারীই এখন উদ্যোক্তা হিসেবে এখন নিজেদের মেলে ধরছেন। প্রযুক্তি তাদের উদ্যোক্তা জীবনকে করেছে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এতে তারা নিজেও স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং পরিবারের উপার্জনে অবদান রাখছে। এর নেপথ্যে সবথেকে বড় ভূমিকাটি রাখছে ‘প্রযুক্তি’।
এমনই একজন উদ্যোক্তা গুটিপা’র স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মিজি। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রযুক্তিকে কেমনভাবে মূল্যায়ন করছেন, জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। তিনি বলেন: একজন নারী উদ্যোক্তার জীবনে প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করেছে, ঠিক তেমনই নারীকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। মার্কেটিং, সেলস, কমিউনিকেশন, নেটওয়ার্কিং আরও বেশি ডিসিপ্লিন্ড করেছে।

ফ্যাশন নিয়ে কাজ করছেন মিজি। প্রযুক্তির ব্যবহার তাকে ট্রেন্ড-ফ্যাশন সম্পর্কে যেমন বিশ্বের নতুন আপডেট গুলো সম্পর্কে আপডেট রাখছে ঠিক তেমনই খুলে দিচ্ছে নতুর নতুন দুয়ার।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমি ফ্যাশন নিয়ে কাজ করছি। যদিও এ বিষয়ে আমার কোন পড়াশোনা ছিল না। প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা যেকোন বিষয়ে ইনফরমেশন গেদার করতে পারছি। সংস্কৃতির বিনিময়ে এটি খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ফ্যাশন এমন একটা জিনিস যেটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। প্রযুক্তি আমাদের সে বিষয়গুলো আপডেট রাখছে।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুটিপা তাদের কালেকশন এবং ফিচারগুলো মানুষের সামনে সহজেই তুলে ধরতে পারছে বলে জানান এ নারী উদ্যোক্তা।
মিজি বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার আরও নানা সুবিধা এনে দিয়েছে তার বিজনেসে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: প্রযুক্তি এখন ট্র্যাকার হিসেবেও সুবিধা দিচ্ছে। ধরা যাক আমার ওয়্যারহাউজ থেকে কাস্টমারের কাছে একটা প্রোডাক্ট পাঠালাম। সেটি এখন কোথায় আছে, কখন ডেলিভারি হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারছি।

প্রযুক্তি একজন নারীকে উদ্যোক্ত হতে যেসব সুবিধা দিচ্ছে তার সঙ্গে মেধার সমন্বয় ঘটাতে পারলে নারী উদ্যোক্তাদের আর পেছনে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য তার।
বলছেন: ট্রেডিশনাল বিজনেসে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় যখন একজন নারী বিজনেস শুরুর পরিকল্পনা করে, তখন যদি সে একটু সেন্স খাটিয়ে তার পণ্যের ফিচারগুলো ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারে; তাহলে সফলতা না আসার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য বলে জানান সফল নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি।
পিঞ্জরা বুটিকসের স্বত্বাধিকারী ফারহানা আহমেদ দুহিতা প্রযুক্তির সুবিধাগুলো তুলে ধরতে গিয়ে বলেন: প্রযুক্তির কারণে পণ্যের সোর্সিং সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারি। আমরা সহজেই নিজেদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে পারছি। ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঘরে বসে নিজেদের উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে শুরু করে পরিচালনা করার সহজ হয়েছে প্রযুক্তির কারণে।
তিনি আরও বলেন: প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানতে পারে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসার উপায় জানতে পারে। প্রযুক্তির সহায়তায় ঘর-সংসার সামলিয়েও নিজের উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারছে নারীরা। এছাড়া পরিচিতি পাওয়ার বড় মাধ্যম এখন প্রযুক্তি।
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন রাঙ্গামাটিতে বসেও অনলাইনের ব্যবসা এবং বিস্তার করে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন অনেক নারী। তারা বলছেন: বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ নেওযা থেকে শুরু করে দেশের বাইরের বায়ারদের সঙ্গেও বিজনেস ডিলগুলো সম্ভব হচ্ছে। যা আগের দিনে কল্পনাতীত ছিল।