চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইফতারে ভাজাপোড়া কতটা স্বাস্থ্যকর

চলছে পবিত্র রমজান মাস। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের এই মাসে মুসলমানদের মনে থাকে বাড়তি আমেজ। সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতার নিয়ে এসময় থাকে বাড়তি প্রস্তুতি। আয়োজন চলে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের, যা তৈরি হয় তেলে, থাকে অনেকরকম সুস্বাদু উপাদান।

দুপুর শেষ হতে না হতেই শুরু হয় ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা। আসরের নামাজের পর প্রতিটি ইফতারের দোকানে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতার ভীড়। অথচ বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতারাও জানেন ইফতারিতে ভাজাপোড়া কতটা অস্বাস্থ্যকর! তবুও কেন ইফতারিতে এই ভাজাপোড়াই চাহিদার শীর্ষে?

সুমন নামের এক ক্রেতা বলছেন, ক্ষতিকর জেনেও বেগুনি, আলুর চপের মতো ভাজাপোড়া নিতে হচ্ছে। বাসার সবাই এসব দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে, পাশাপাশি আমি নিজেও। এটা আমাদের ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। ছোট থেকেই এভাবে অভ্যস্ত। ইফতারিতে ভাজাপোড়া না থাকলে ভালো লাগে না।

ভাজাপোড়া খাবারে শারীরিক সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজানের শুরুতে একটু পেটে সমস্য হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত গরম পড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণ লিকুইড রাখা হয়। যার ফলে সমস্যা হয় না। বাজারের এসব ভাজাপোড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফলমূল রাখেন বলেও জানান তিনি।

হোটেলে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের তৈলাক্ত খাবার

আরেক চাকরিজীবী মো. আলিম বলেন, ‘দোকানের ইফতারে ভেজাল থাকে। তেলসহ তাদের তৈরির সকল উপাদানে কোন না কোন ভেজাল থাকবেই। তবে ব্যাচেলর হওয়াতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব খেতে হচ্ছে।’ এসময় তিনি নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে তদারকি করার জন্য ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের ইফতারিতে ভালো খাবার সরবারহ করার চেষ্টা করছেন তারা। মহাখালীর হানিফ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘আমরা চেষ্টা করি প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন শেষ করতে। যদি কোনো কারণে অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন আমরা তা ফেলে দেই।’ ব্যবহৃত তেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনের তেল প্রতিদিন ব্যবহার হয়। বেঁচে যাওয়া তেল ফেলে দেওয়া হয়।

ইফতারিতে ভাজাপোড়া শারিরীক যে সমস্যা হতে পারে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার সুমি বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে শরীরের দু’ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। যার একটি স্বল্পমেয়াদি সমস্যা, আর অন্যটি দীর্ঘমেয়াদী। যেটি শরীরকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

ইফতারিতে বাজারে তৈরি করা ভাজাপোড়া খাওয়ার পর প্রাথমিক যে সমস্যাগুলো হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে, পেটে জ্বালাপোড়া, এসিডিটি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ার ইত্যাদির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো সাধারণত ইফতারের পর খাবারে কিছুটা ব্যালেন্স করলে ঠিক হয়ে যায়।

জাহানারা আক্তার সুমি

‘তবে দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যা হতে পারে, যা শরীরকে মারত্মক ঝুঁকিতে রাখতে পারে। হোটেলে একই তেল বারবার ব্যবহারের ফলে ওই তেলে ভাজা পণ্যগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করছে। অর্থ্যাৎ আমরা বলতে পারি হোটেলে তৈরি করা এই ভাজাপোড়া আপনাকে ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়াও প্রেশার বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়াসহ মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতাতেও আঘাত করে থাকে’।

ইফতারিতে যে ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে: ইফতারে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ না করে লিকুইড জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা। এছাড়া ফলমূল রাখাও শরীরের জন্য বেশ উপকারী বলে মনে করছেন তারা।

পুষ্টিবিদ জাহানারা বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর এমনিতে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। সুতরাং এসময় শরীরে পানীয় জাতীয় খাবারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। যার ফলে, আপনাকে অবশ্যই লিকুইড জাতীয় খাবার রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ফলের জুস খুব বেশি উপকারী। পাশাপাশি চিড়া, সালাদ কিংবা ছোলা সিদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে।

ইফতারিতে ভারি খাবার গ্রহণ না করে, হালকা খাবার গ্রহণ করার জন্য বলছেন তিনি। জাহানারা বলেন, ‘সারাদিন রোজা রাখার পর, ইফতারিতে হালকা লিকুইড জাতীয় খাবার খেয়ে দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টা পর ভারী খাবার গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।