স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপি নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করছে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বক্তব্য সরকার প্রত্যাখান করেছে।
শনিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে কনভেনশন হলে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্রমাগতভাবে এ দেশ নিয়ে তারা মিথ্যাচার করছে। কয়েকটি দেশ ছাড়া সব দেশ নির্বাচন নিয়ে ভালো তথ্য দিয়েছে। তবে কে কী বলল তা আমাদের দেখার বিষয় নয়, প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিকভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্তের কারণে কিছু আন্তর্জাতিক মহল আমাদের নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তবে তারা এতে সফল হবে না।
তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: নির্বাচন করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে আত্মগোপন করেছেন। ইংল্যান্ডে বসে থেকে তিনি এদেশে তার দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি শুধু এ দেশের জনগণ নয়, তার দলীয় নেতাকর্মীদেরও তিনি ভালো-মন্দ চান না। দিন দিন এই দলটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাবেন তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, যতদিন প্রধানমন্ত্রী বেঁচে থাকবেন, ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
সংবিধান অনুযায়ী যেন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছেন দাবি করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নির্বাচনকালে নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে অনেক মন্ত্রী, বড় বড় নেতা এই নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছেন। কাজেই আমরা সুনিশ্চিত করে বলতে পারি এই নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি হয়নি বা কোনো ধরনের সহায়তা কেউ পেয়েছে বলে আমরা মনে করি না, দেখিওনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এখানে অন্যায়ভাবে বা রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তারা যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তবে তারা নির্বাচনের পরে মনগড়া তথ্য প্রচার করে বিদেশিদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি সাংবাদিকরা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের সুষ্ঠু হয়েছে। আমেরিকারও দুই একটি সংগঠন বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
তবে কে কি বলল সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। আমাদের দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুক্রবার (৮ মার্চ) দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইইউর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যেমন সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটি সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগির চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সাথে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের জন্য বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার মতো পরিবেশ ছিল না। নির্বাচনের কোনো স্বাধীন মূল্যায়ন নির্দলীয় নাগরিক সমাজ দ্বারা পরিচালিত হয়নি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন একটি অত্যন্ত মেরুকরণ করা রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত নির্বাচন ছিল উল্লেখ করে ইইউ বলে, বিএনপি ও তার জোট শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় এতে সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়।