গাজায় চলমান সংঘাত ও বেসামরিক নাগরিক মারা যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ।
বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল (৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো বক্তব্য রাখলেন তিনি। হিজবুল্লাহ প্রধান কোথা থেকে এই বক্তব্য দিয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ আরও কিছু শহরে তার বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার দেখার জন্য রাস্তায় জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ।
এই ভাষণের পাঁচদিন আগে থেকে লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় সময়সূচী ঘোষণা করে হিজবুল্লাহ। হাসান নাসরাল্লাহ তার বক্তব্য শুরু করেন ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত হিজবুল্লাহ সদস্য ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। বক্তব্যে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতর হামাস যোদ্ধাদের হামলারও প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, গাজায় চলমান সংঘাতের দায় পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের এবং ইসরায়েল এখানে নির্বাহী মাত্র।
হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন, তোমরা, আমেরিকানরা ভালো করেই জানো, এখানে যুদ্ধ শুরু হলে তোমাদের নৌবহর কাজে আসবে না, আকাশপথে লড়াই করেও কাজ হবে না। তোমাদের সেনাবাহিনী ও নৌবহরকেই এর মূল্য দিতে হবে। লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর লড়াই দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ কারণেই সেনাদের সরিয়ে উত্তরে লেবানন সীমান্তে রাখতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েল। এখানে লড়াই কেমন হবে তা নির্ভর করবে গাজার ওপর।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরের ইসরায়েল উপকূলের কাছাকাছি যুদ্ধবিমানবাহী ২টি রণতরী পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই রণতরী মোতায়েনের বিষয়টি উল্লেখ করে হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, এসব নিয়ে হিজবুল্লাহ ভীত নয়। সরাসরি বলতে চাই, এগুলো দিয়ে তোমরা আমাদের হুমকি দিচ্ছ, আমরা তোমাদের নৌবহর ঠেকাতে জোরপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
হিজবুল্লাহর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা। তাদের সমৃদ্ধ অস্ত্রভাণ্ডারে আছে এমন মিসাইল যা ইসরায়েলে বহুদূর পর্যন্ত আঘাত করতে পারে। তাদের সেনাবাহিনীতে প্রায় লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ যোদ্ধা রয়েছে। ইসরায়েলের সাথে ২০০৬ সালে কয়েক মাসব্যাপী যুদ্ধে জড়িয়েছিল তারা। আবারো সেই ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় লেবাননের অনেক মানুষই এখন আতঙ্কিত।
অক্টোবর মাসে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্রতা বাড়ার পর থেকে তাদের ওপর হিজবুল্লাহর আক্রমণের মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত তাদের সংঘাত লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তেই সীমাবদ্ধ ছিল। আর দুই পক্ষই বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। তবে হিজবুল্লাহ প্রধানের আগ্রাসী বক্তব্যের পর এই পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা।
ধারনা করা হচ্ছিল এই বক্তব্যে হিজবুল্লাহর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ইঙ্গিত দিবেন হাসান নাসরাল্লাহ। তবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে কিনা, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানাননি তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় বহু বছর তিনি জনসম্মুখে আসেননি। তবে হিজবুল্লাহ সদস্য আর লেবাননের মানুষের উদ্দেশে তিনি নিয়মিত ভাষণ দিয়ে থাকেন, যা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।