নাটক সিনেমায় সুবর্ণার আলোচিত পাঁচ
সুবর্ণা মুস্তাফা, মুগ্ধতা ছড়ানো এক অভিনেত্রীর নাম। টানা কয়েক দশক ধরে টিভি নাটক ও সিনেমা অঙ্গন রাঙিয়ে চলেছেন তিনি…
সুবর্ণা মুস্তাফা, মুগ্ধতা ছড়ানো এক অভিনেত্রীর নাম। টানা কয়েক দশক ধরে টিভি নাটক ও সিনেমা অঙ্গন রাঙিয়ে চলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে আলো ছড়িয়েছেন মঞ্চেও। ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া গুণী এই অভিনেত্রী বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) পূর্ণ করলেন ৬২ বছর! বিশেষ এই দিনে ছোট ও বড়পর্দার তারকা অভিনেতা, নির্মাতা থেকে শুরু করে শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ এর মুনা!
তার অভিনীত অসংখ্য নাটক, সিনেমা আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে। তার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচিত পাঁচটি নাটক, সিনেমার কথা থাকলো এখানে:
সময়ের আগে নির্মিত ছবি ‘ঘুড্ডি’
আশির দশকেও যে কতো অসাধারণ সিনেমা হতো বাংলাদেশে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ‘ঘুড্ডি’। ১৯৮০ সালে নির্মিত এই ছবির মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে পা রাখেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এতো আধুনিক সিনেমা সমকালীনতো বটেই, এই সময়ে এসেও আর দ্বিতীয়টি নেই! সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত ছবিটিকে সুবর্ণা বলেন ‘সময়ের আগে নির্মিত একটি ছবি’। এই ছবিতে সুবর্ণার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায় ছিলেন লাকী আখন্দ। গীতিকার ছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন হ্যাপী আখন্দ, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, শিমুল ইউসুফ ও লিনু বিল্লাহ। এই ছবির গানগুলোর মধ্যে আবার এলো যে সন্ধ্যা, সখী চল না- এখনও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
মন ছুঁয়ে যাওয়া ‘নয়নের আলো’
একজন গায়ক ও দুই তরুণীর ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বেলাল আহমেদ। গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল, এবং দুই তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন কাজরী ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এই ছবিতে নয়ন চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা। তাঁর অভিনয় সেসময় দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। ঘুড্ডির মতো এই ছবির গানগুলোও তৎকালীন সময়ে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এরমধ্যে আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি, আমার বাবার মুখে এবং আমার বুকের মধ্যেখানে গানগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মধ্যবিত্ত জীবনের দুঃখগাথা ‘শঙ্খনীল কারাগার’
১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি পরিচালনা করেন মুস্তাফিজুর রহমান। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রে মধ্যবিত্ত সমাজের গল্প দেখানো হয়। যেখানে রুনু চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই চরিত্রটিও তৎকালীন সময়ে দর্শক মনে জায়গা করে নেয়। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
দর্শক মনের হাহাকার ‘কোথাউ কেউ নেই’
সিনেমা নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত তুমুল জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিক। নব্বই দশকের শুরুতে যে নাটকটি সাড়া ফেলে দেয় সমস্ত বাংলাদেশে। নাটকের অন্যতম চরিত্র ‘বাকের ভাই এই নাটকে অভিনয় জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নির্দেশক বরকত উল্লাহ নির্দেশিত জনপ্রিয়তম ধারাবাহিক। একই নামে লেখকের একটি উপন্যাসও রয়েছে। মূলত উপন্যাসের কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ধারাবাহিকটি নির্মিত হয়। এর আবহ সংগীতের কাজ করেন সংগীতকার মকসুদ জামিল মিন্টু।
‘গণ্ডি’তে আটকে না থাকার গল্প
বাষট্টি পূর্ণ করেছেন, তবু সব মাধ্যমে অভিনয়ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। গেল বছরের শুরুতে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ছবি ‘গণ্ডি’। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তিনি, তার সহ-অভিনেতা ফেলুদা খ্যাত কলকাতার তুখোড় অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। বয়স, সীমারেখা, ধর্ম- এ ধরনের কোনো গণ্ডি দিয়েই বন্ধুত্বকে আটকে রাখা যায় না; এটিই এই ছবির মূল বক্তব্য। ছবিতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা পেয়েছেন সুবর্ণা।