বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী করতে সরকার ইউনিসেফের সহায়তায় শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সমাজকর্মীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের জন্য এক হাজার ২০০ জনের বেশি নতুন সমাজকর্মী নিয়োগ করেছে, যার ফলে শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সমাজকর্মীর মোট সংখ্যা চার হাজারে উন্নীত হয়েছে।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার শিশু সুরক্ষা খাতে এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি সমাজকর্মী নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করেছে। দেশজুড়ে শিশু ও তাদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি একটি গুরত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
শিশু সুরক্ষা সামাজিক সেবায় (চাইল্ড প্রোটেকশন সোশ্যাল সার্ভিসেস) অন্তর্ভুক্তির প্রথম ধাপ হিসেবে আজ ঢাকায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর (ডিএসএস) ও ইউনিসেফ যৌথভাবে নতুন এই সমাজকর্মীদের জন্য তিন দিনব্যাপী ‘প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ’ (ট্রেনিং অফ ট্রেইনার্স-টিওটি) কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
সতর্কতার সাথে বাছাইকৃত এই সমাজ কর্মীরা যেন শুরুতেই তাদের নতুন কর্মক্ষেত্র ও দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা পায় এবং সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেভাবে প্রশিক্ষণটি সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি জোর দেয়া হয়েছে, শিশুর সুরক্ষা, পারিবারিক সহায়তা, জরুরি পরিস্থিতিতে পরিষেবা এবং শিশু অধিকার বিষয়ক নীতি বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তাদের কাজ করার দক্ষতা গড়ে তোলার উপর। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার মাধ্যমে সেবা প্রদানের মান উন্নত করা এবং সকলের জন্য এই সেবা সহজলভ্য করা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার শিশুদের সব ধরনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন এই সমাজকর্মীদের নিয়োগ দেশের শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে আমাদের অঙ্গীকারের একটি নজির।
তিনি বলেন, সরকারি প্রচেষ্টাগুলোর প্রতি সমর্থন, সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিটি শিশু যাতে তার প্রাপ্য যত্ন ও সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফের যে প্রতিশ্রুতি তার আমরা প্রশংসা করি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি বলেন, আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। একটি উন্নত জাতি গড়ে তুলতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। সমাজকর্মীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারের এই প্রয়াসকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাধুবাদ জানায়। সমাজ সেবার ক্ষেত্রে আমরা সরকার ও অন্যান্য সমমনা অংশীজনদের সাথে প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছি। আমাদের এই সমন্বিত প্রয়াসের ফল দেখে আমরা সত্যিই গর্বিত।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় নিয়োজিত সমাজকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সমান গুরুত্বপূর্ণ তাদের মাঝে সঠিক তথ্য ও জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটানো। কেননা, শিশু ও তাদের পরিবার যখন কোনো সহিংসতার শিকার হয়, তখন এই সমাজকর্মীরাই তাদের পাশে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা নিয়ে দাঁড়ায়।
এই অগ্রগতি সত্ত্বেও শিশু শ্রমের ব্যাপকতা, অপর্যাপ্ত জন্ম নিবন্ধন, প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা শিশুদের জীবনে পারিবারিক সহায়তার অভাব এবং শিশুবিয়ের উচ্চ হারের মতো চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশে এখনও বিদ্যমান। ইউনিসেফ বিশ্বাস করে, সরকার, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সাথে নিয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এইসব সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। সাথে প্রয়োজন, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ চলমান রাখার এবং প্রান্তিক পর্যায়ের শিশু ও পরিবারগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির।
ইউনিসেফ দেশের বিপুল সংখ্যক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের কার্যকরভাবে সহায়তা করার জন্য শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর ও তাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে একত্রে ইউনিসেফ একটি বিস্তৃত জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর অধিকার ও সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করবে।