গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখরিয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে হরতাল-অবরোধ সফল করার জন্য ব্যাপক প্রাণহানির ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য রেললাইনকে বেছে নেয়া হয়েছিল।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন-জান্নাতুল ইসলাম (২৩), মেহেদী হাসান (২৫), মো. হাসান আজমল ভূইয়া (৫০), জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয় (৩৫), শাহানুর আলম (৫৩), মো. সাইদুল ইসলাম (৩২) ও সোহেল রানা (৩৮)।
পুলিশ কমিশনার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দুষ্কৃতকারী দলের জান্নাতুল ইসলাম ও মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারা জানায় কোনাবাড়ী এলাকা থেকে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পরে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে একটি হায়েস গাড়ি ভাড়া করে। ওই গাড়ি নিয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও তারা ঢাকায় না গিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। সবাই মুখোশ পরা অবস্থায় ছিল। এ অবস্থায় ড্রাইভার ভয় পেয়ে তাদের ঢাকায় না যাওয়া এবং মুখোশ পরার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে একজন মুখোশ খোলে ড্রাইভারকে তার চেহারা দেখায়। তারপর ড্রাইভার তাকে চিনতে পেরে আর কিছু বলে না।
ওই ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে তারা রেললাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশে বের হয়। পথে তারা শিববাড়ী, জোড় পুকুরপাড়সহ আরও বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গাড়িতে উঠায়। একপর্যায়ে তারা গাজীপুর সদর থানাধীন জোড় পুকুরপাড়স্থ ইবনে সিনহা তোহার বাড়ি থেকে রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি এবং দক্ষিণ সালনা, উসমান গণির ভাড়া দেওয়া ‘বাঁশ বাগান’ রেস্টুরেন্ট থেকে দুইটি গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে উঠায়।
মাহবুব আলম বলেন: এরপর তারা গাজীপুর শহরে ঘোরাঘুরি করে আনুমানিক রাত ৩ টার পরে বনখরিয়া এলাকায় ঘটনাস্থল থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বে বনের পাশে গাড়ি রেখে হেঁটে তারা গ্যাস সিলিন্ডারসহ সরঞ্জমাদি নিয়ে বনখরিয়া চিনাই রেলব্রিজের পাশে যায়। সেখানে গিয়ে তারা তারা ২০ ফুট রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। আটকরা সবাই বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।
আটকদের ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে কমিশনার বলেন: গত ১১ ডিসেম্বর দিনগত রাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক বিএনপি নেতা আজমল ভূঁইয়ার বাসাসহ বিভিন্নস্থানে মিটিং হয়। মিটিংয়ে রেল লাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর বিষয়ে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত করা হয়। মিটিংয়ে আলোচনা হয় যে, দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে; বড় কোন ঘটনা ঘটলে দেশ ও বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে বিধায় তারা রেল লাইনে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা করে। সরকারের বর্তমান নির্বাচনী কার্যক্রমকে বির্তকিত করা, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে বিরাজমান রাষ্ট্রীয় সু-শৃংখল পরিবেশকে নষ্ট করা, জনমনে ভীতি সঞ্চার করা এবং এর মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে ব্যপক মিডিয়া কাভারেজ, হরতাল-অবরোধ সফল করার জন্য ব্যাপক প্রাণহানির ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য রেললাইনকে বেছে নেয়া হয়েছিল যা দেশ ও বিদেশে আলোড়ন তৈরি করতে পারে। তারই প্রেক্ষিতে রেল লাইন কাটার বাস্তবায়ন ঘটায়। এই ঘটনার কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন: মাইক্রোবাসের চালক ঘটনার সাথে সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে এবং নাশকতার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং এর প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীও পাওয়া গেছে। নাশকতায় জড়িত অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে একদল দুষ্কৃতকারী শ্রীপুর উপজেলার বনখরিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন কেটে ফেলে। এরপর ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন মারা যায় এবং কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।