কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুর খবর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে গেছেন সুপারস্টার শাকিব খান। মৃত্যু খবর শুনে আরও এসেছেন উজ্জ্বল, বাপ্পারাজ, অনন্ত জলিল, সম্রাট, বর্ষা, কণ্ঠশিল্পী মনির খানসহ অনেককে।
হাসপাতালে গিয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে উপলের সঙ্গে কথা বলেন তারা এবং সান্ত্বনা দেন। এছাড়া হাসপাতালে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে সকাল নিজের ফেসবুক পেজেও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্য শোকবার্তা দেন শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘বাংলা গানে এক অনন্য-অসাধারণ গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার আঙ্কেল আর নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরম শ্রদ্ধেয় এই মানুষটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
শাকিব আরও লেখেন, ‘বর্ণিল কর্মময় জীবনে গাজী আঙ্কেল গানের বাইরে বিকশিত হয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক হিসেবেও। শিল্প সংস্কৃতির প্রায় প্রতিটি সেক্টরে তিনি পেয়েছেন বিস্ময়কর সব সাফল্য। মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ; বৈচিত্র্যময় সব অনুভূতি প্রকাশে এ দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আজীবন ভীষণ প্রিয় হয়ে থাকবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অমর সব সৃষ্টি।’
হাসপাতালে শিল্পী মনির খান বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন আমার পিতার মতো। প্রতিদিনই তার সঙ্গে ফোনে কথা হতো। একদিন ফোন না করলে উনি ফোন করে শরীর খারাপ কিনা জিজ্ঞেস করতেন। তার মতো গুণী মানুষ আমরা আর কখনো পাবো না।
অনন্ত জলিল বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে আমার পরিচয়। উনি আমাকে প্রথমদিন দেখে বলেছিলেন আমি একজন সৎ মানুষ। এতগুলো বছর ধরে গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাহেবকে চিনি কিন্তু আজ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের মানুষ হয়েও তার কোনো বদনাম নেই। তাহলে আমাদের বোঝা উচিত উনি কতটা ভালো মানুষ।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পর রোববার সকালে গাজী মাজহারুল আনোয়ার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার মরদেহ সেখানেই রয়েছে।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল জানিয়েছেন, সোমবার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। সেখানে তিনি তার মায়ের কবরে শায়িত হবেন। সোমবার সকাল ১১টায় এই গীতিকারের মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে; এরপর নেওয়া হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। জানা গেছে, গত কয়েক দিন থেকে অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সকালে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।
‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’সহ অসংখ্য গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন পাঁচ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই গীতিকার-প্রযোজক।