চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শ্রমিকদের উন্নত জীবন ব্যবস্থা ও গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা বিষয়ক কিছু ভাবনা

একটি রাষ্ট্রের অধীনে অনেকগুলো শ্রেণী বসবাস করে। যেমন বুর্জোয়া, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ইত্যাদি। প্রতিটি শ্রেণী তাদের নিজ নিজ স্বার্থের অবস্থান থেকে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানায়। আবার রাষ্ট্র নিজে কোনো শ্রেণী নিরপেক্ষ নয়। রাষ্ট্র কোনো না কোনো শ্রেণী স্বার্থে কার্য পরিচালনা করে। ফলে সমাজে বসবাসরত শ্রেণী সমূহের স্বার্থের সাথে রাষ্ট্রের স্বার্থের একটি দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত বিরাজমান থাকে।

রাষ্ট্র যেহেতু রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হয় ফলে রাজনৈতিক আদর্শ রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তাই রাষ্ট্র শ্রেণী নিরপেক্ষ হতে পারে না। কিন্তু রাষ্ট্রকে সকল শ্রেণীর মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হয়। এই সমন্বয় করার নাম জাতীয় স্বার্থ। জাতীয় স্বার্থ যেহেতু শ্রেণী স্বার্থের উর্দ্ধে ফলে রাজনীতিবিদগণকে রাজনীতিতে জাতীয় স্বার্থকে শ্রেণী স্বার্থের আগে প্রাধান্য দিতে হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা এই রাষ্ট্রের অধীন একটি শ্রমজীবী শ্রেণী। অন্যান্য সকল শ্রমজীবীদের মতোই গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বার্থকেও রাষ্ট্রের গুরুত্ব দিতে হবে। উপরন্তু রাষ্ট্রের বৈদেশিক আয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভূমিকা আছে। আবার গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরাও পুঁজিপতি শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। গার্মেন্টস শিল্প যেহেতু একটি বড় শিল্প ব্যবস্থা এবং প্রধান কর্মসংস্থানের উৎস কাজেই এই শিল্পের স্বার্থকেও রাষ্ট্রের গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। এই দুই শ্রেণী স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে জাতীয় স্বার্থকে। রাজনীতিতে যেহেতু জাতীয় স্বার্থ শ্রেণী স্বার্থের উর্দ্ধে, কাজেই গার্মেন্টস শ্রমিক শ্রেণীকেও জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে নিজ শ্রেণী স্বার্থ হাসিল করতে হবে। নিজ শ্রেণী স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শিল্প ব্যবস্থা কোনো কারণে ধ্বসে গেলে তা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর তথা জাতীয় স্বার্থের প্রতি আঘাত। এখানেই রাজনীতির মূল দ্বন্দ্ব। কখনও কখনও রাজনৈতিক ভুলে শ্রেণী স্বার্থ জাতীয় স্বার্থ থেকে উপরে উঠে যায় ফলে সেই শ্রেণী স্বার্থের আন্দোলন রাষ্ট্র বল প্রয়োগে দমন করে। রাষ্ট্রীয় চিন্তা থেকে সেই বল প্রয়োগ বৈধ ও অন্যান্য শ্রেণী রাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়। ফলে সেই দাবি জনসমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়।

গার্মেন্টস শিল্প যেহেতু মজুরি নির্ভর ফলে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন এই শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। উপরন্তু ভিন্ন রাষ্ট্র যারা এই দেশের গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষতি চায় তাদের স্বার্থরক্ষা হয়। বরং এখানে শিল্প বাঁচবে এবং শ্রমিক লাভবান হবে এমন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কর্মসূচী দেয়া উচিৎ, তাহলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হয়। আর তা না হলে শ্রেণী স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এখানে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন এর ফলে গোটা শিল্প ব্যবস্থা যদি ধ্বংস হয় বা এখান থেকে অন্যত্র চলে যায় তবে এই শ্রমিকরাই আবার কাজের দাবিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবে। ফলে শ্রমিকদের বর্তমান কর্মসংস্থানের উৎস যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় তা দেখাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মজুরির সাথে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই মৌলিক চাহিদা থেকে রাষ্ট্র যদি ২/৩ টি চাহিদা অন্য সেক্টর থেকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করে তবে এই শিল্পের মালিকদের উপর চাপ কম পড়ে। যেমনঃ

১। বৈদেশিক আয়ের একটি অংশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বিনিয়োগ করে সেই ফান্ডকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য ব্যয় করা যেতে পারে।(উদাহরণ)

২। বায়ার-মালিক যৌথভাবে রাষ্ট্রের সাথে পিপিপি প্রজেক্টে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাসস্থানের উদ্যেগ নিতে পারে (প্রস্তাবিত)

৩। জাতীয় বাজেটের একটি অংশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করার দাবি জানাতে পারে (প্রস্তাবিত)।

বাসস্থান ফ্রি পেলে মজুরির উপর তার প্রভাব পড়বে। ঢাকা শহরে শ্রমিকদের মজুরির ৬০% চলে যায় বাসস্থানে। এইভাবে রাষ্ট্রের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদের দাবির পাশাপাশি গোটা শিল্প রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। মোট কথা গার্মেন্টসে তৈরি পোশাকের দামের উপর প্রভাব পরে এমন দাবি শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা প্রথমে এই দেশের নাগরিক পরে শ্রমিক। শ্রমিক হিসেবে তার উন্নত জীবন ব্যবস্থার দাবি রাষ্ট্রের কাছে থাকবে আর নাগরিক হিসেবে জাতীয় স্বার্থে গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করার দায়িত্বও থাকবে। গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক উভয় সংগঠনকে গোটা শিল্পের দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)