ফ্রি ফায়ার গেমসে হেরে গামছা পেঁচিয়ে বন্ধু সাব্বিরকে হত্যা করে আরেক বন্ধু ফেরদৌস। এ ঘটনায় আসামি ফেরদৌসকে ৩০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বাগেরহাট জেলা।
১ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে পিবিআই, বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মো. আবদুর রহমান বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে পিবিআই বাগেরহাট জেলার একটি তদন্ত টিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর মো. ফেরদৌসকে (১৭) নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গত সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে।
আসামির দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, ভিকটিমের ভ্যান গাড়ি ও অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোনের অংশ বিশেষ জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস জানায়, ফ্রি ফায়ার খেলায় হেরে ফেরদৌসকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ভুক্তভোগী সাব্বির। ফেরদৌস তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্য অপেক্ষায় থাকে। গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে ভুক্তভোগী সাব্বিরকে (১৫) ডেকে নিয়ে আসা হয়। গ্যারেজের মধ্যে বসে সাব্বির গেম খেলারত অবস্থায় ফেরদৌস পিছন থেকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ গ্যারেজের খাটের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে।
ভুক্তভোগী সাব্বিরের ভ্যান গাড়ীটি ছোট ছোট করে ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করা হয়। ১০ জানুয়ারি রাতে একটি গোডাউনের নিচে লাশ ফেলে দিয়ে আর্বজনা দ্বারা ঢেকে রাখার পর সকালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে ফেরদৌস।
পিবিআই, বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মো. আবদুর রহমান বলেন, মামলাটি পিবিআইয়ের তফসিল ভুক্ত হওয়ায় আমরা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করি। আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর মো. ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে আদালতে পাঠালে ফেরদৌস আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
জানা যায়, ভুক্তভোগী সাব্বির শেখ বাগেরহাটের পাতলা টু তেরখাদা রাস্তায় বেশীর ভাগ সময় ভ্যান চালাত। গত ৯ জানুয়ারি সকালে ভ্যান চালানোর উদ্দেশে বাড়ি থেকে ভ্যানসহ বের হয়। দুপুর আড়াই টার সময় সাব্বিরের মা তাকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসার কথা বললে সাব্বির জানায়,“আমি ভাড়া নিয়ে পাতলা টু তেরখাদা যাচ্ছি, আসরের দিকে বাড়ি আসব।” সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পর সাব্বির বাড়ি না আসলে, মোবাইলে কল করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ভিকটিম সাব্বিরের পিতা শেখ বোরহান ১১ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
প্রায় সপ্তাহ বাদে ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর পিতা জানতে পারেন যে, মোল্লাহাটের ছোট কাচনা গ্রামের ওমরের মোড় সংলগ্ন গোডাউনের নিচে ফাঁকা জায়গায় একটি পঁচাগলা লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন মোল্লাহাট থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ মৃত দেহ দেখতে পান। ভুক্তভোগীর পিতা তার আত্মীয় স্বজন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মৃত দেহ দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
পরে ২৩ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মোল্লাহাট থানায় শেখ বোরহান বাদী হয়ে হত্যা মামলা (নং-১২) দায়ের করেন।