অ্যাওয়ে ম্যাচে পাঁচ গোল হজমের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে গোলশূন্য প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে ফিলিস্তিন। চলতে থাকে দুদলের শারীরিক শক্তির প্রদর্শনীও। বারবার দেখা যায় ফাউলের দৃশ্য। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবলে লড়াই জমায় বাংলাদেশও। শেষ মুহূর্তের গোল হজমে অবশ্য ১-০ ব্যবধানে হেরে মাঠ ছাড়ে হাভিয়ের ক্যাবরেরার দল।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সাত মিনিটে শেহাব কুমবরকে ফাউল করে বিশ্বনাথ ঘোষ হলুদ কার্ড দেখেন। দ্বাদশ মিনিটে বক্সে বিশ্বনাথ আবারও ফাউল করেন, ফ্রি-কিক পায় ফিলিস্তিন। রাশিদের কিক মিতুল মারমা কোনমতে ঠেকালেও বল পরে রক্ষণের খেলোয়াড়রা মিলে বিপদমুক্ত করেন। একপর্যায়ে স্বাগতিক ফরোয়ার্ড রাকিব ও অতিথি দলের রাশিদ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। রেফারির হস্তক্ষেপে দুজনে আবার নিজেদের মাঝে মীমাংসাও করে নেন।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে মুসাব বাত্তাত্তের দূরপাল্লার শট লাফিয়ে বলে হাত ছুঁইয়ে কর্নারের বিনিময়ে জাল অক্ষত রাখেন মিতুল। পাল্টা আক্রমণে ২২ মিনিটে লাল-সবুজের দলের সামনে সুযোগ এসেছিল। সতীর্থের পাসে বল পেয়ে ফাহিম বক্সে ঢুকে ক্রস দিলেও সেসময় বল আদায়ে কেউ না থাকায় সুযোগ নষ্ট হয়।
রাকিবকে পেছন থেকে ফাউল করায় ২৪ মিনিটে আমেদ মাহাজনেহ হলুদ কার্ড দেখেন। খানিক পর কটূক্তির জন্য ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনকেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়।
দারুণ আক্রমণ গড়ে স্বাগতিকরা ৩০ মিনিটে গোলের আরেকটি সুযোগের কাছে গিয়েছিল। রাকিবের পাসে বল আদায় করা মজিবুর রহমান জনির ফিনিশিং দুর্বলতায় তা কাজে লাগেনি। মিনিট দুয়েক পর বক্সের বাইরে থেকে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে বের হয়।
ওদায় দাব্বাঘের বাঁ-পায়ের কোণাকুণি শট ৩৩ মিনিটে লুফে নিতে পারেন মিতুল। খানিক পর বিশ্বনাথের জোরাল শট অতিথি দলের শেহাব কুমবরের মাথায় লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। খানিকক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। কিছুপর তিনি মাঠে ফেরেন।
প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বাত্তাতের ফ্রি-কিকে হেড নেন কুমবর, ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল দারুণ সেভ করেন। দুমিনিট পর মোহাম্মেদ রাশিদের বাঁকানো ফ্রি-কিক শট উপরের জালে লাগে।
বিরতির আগমুহূর্তে দুর্দান্ত আক্রমণে ৪৪ মিনিটে ম্যাচের সেরা সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক জামালের পাসে বল নিয়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ডান পায়ে শট নেন। এগিয়ে এসে ফিলিস্তিন গোলরক্ষক রামি হামাদা পা দিয়ে বল ঠেকান। গোলশূন্য শেষ হয় প্রথমার্ধ।
ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ফাঁকা জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন দাব্বাঘ, বেঁচে যায় স্বাগতিক দল। শাকিল হোসেন ব্যাক পাসে গোলরক্ষক মিতুলকে বল দেন। কিক নিতে গিয়ে মিতুল গড়বড় করে বসেন। প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ড দাব্বাঘ বল নিয়ে শট নিলেও তা অবিশ্বাস্যভাবে জাল খুঁজে পায়নি!
এরপর পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট, রক্ষণ সামলে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা আরম্ভ করে স্বাগতিক দল। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে ৫২ মিনিটে আক্রমণে উঠে টাইগার অধিনায়ক জামালের ক্রস ফিলিস্তিন গোলরক্ষক হামাদা ধরে ফেলেন। বক্সে ফাহিমকে পাস দিলে লক্ষ্যভেদের ভালো সম্ভাবনা ছিল। পরের মিনিটে জনির দূরপাল্লার শট পোস্টের বেশ উপর দিয়ে যায়।
ম্যাচের ৫৬ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা জনির কিক বক্সের ভেতর হেডে বিপদমুক্ত করেন মাহাজনেহ। মিনিট দুয়েক পর বদলি নামা মাহমৌদ ধাধার লম্বা পাসে কিক নেন দাব্বাঘ, ফিস্টে বল প্রতিহত করেন মিতুল।
কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা জামালকে ৭০ মিনিটে বেঞ্চে বসিয়ে আগের খেলায় শুরুর একাদশে থাকা সোহেল রানাকে মাঠে পাঠান।
গোলপোস্টের সামনে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা মিতুল ৭৪ মিনিটে ওদায় খারউবের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান। ৮০ মিনিটে সোহেল রানার হলুদ কার্ড দেখেন রেফারির সাথে তর্কে জড়িয়ে। অল্পক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন মিতুল। বদলি গোলরক্ষক নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
বিশ্বনাথের লম্বা থ্রোয়ে বক্সে থাকা তপু বর্মণের হেড বাইরের জালে লাগে। এরপর পাল্টা আক্রমণে বদলি নামা প্রতিপক্ষের আলায়দিন হাসানের শট উপর দিয়ে যায়। ৮৯ মিনিটে জনির জায়গায় ঈসা ফয়সালকে নামানো হয়। নির্ধারিত সময় শেষে জানানো হয় যোগ হয়েছে আরও আট মিনিট।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ঘটে নাটক। বক্সের ভেতর আক্রমণে ওঠা রাকিবের সঙ্গে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের ধাক্কা লাগে। রাকিব পড়ে গেলেও রেফারি পেনাল্টির সংকেত না দেয়ায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঝে বিরক্তি ছড়ায়। মাঠে পড়ে থাকা রাকিবকে টেনে নিয়ে যান মাহাজনেহ, রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখান। তর্কে জড়ানোয় রেফারি তাৎক্ষণিক তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়া করেন।
ম্যাচে ৯৪ মিনিটে কিংস অ্যারেনায় নেমে আসে বেদনার পরিবেশ। বাত্তাতের ক্রসে ধাধার নেয়া হেডে বল নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মিকেল তেরমানিনি, পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বাকি সময়ে আর সমতায় ফিরতে না পারায় জামাল ভূঁইয়ার দল পায় পরাজয়ের স্বাদ।